বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫

অমরনাথ যাত্রা



 
অমরনাথ যাত্রা

  পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে হিমালয়কে শেষ ছুঁয়েছিলাম ২০১২সালে। তারপর থেকেই অবস্থাটা পিঞ্জরে বসিয়া শুক, মুদিয়া নয়নে…’নয়ন মুদিয়া না হয় কিছুকাল থাকা যায়কিন্তু চিত্তের ছটপটানি!তাকে যে খোলস ছাড়তে হিমালয়ের পথে যেতেই হবে নইলে উৎসাহ আসে না কর্মে। সেই কিশোর বয়সে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হিমালয় ভ্রমণ সভ্‌নাঁ জীয়াকা তুম্‌ দাতা (একো দাতা),সো মৈঁ বিসরে না জাইএমন ছবি এঁকেছিল তা এখন সংস্কার হয়ে গিয়েছেঅগত্যা তার সন্তষ্টির জন্য বহু চেষ্টা ব্যর্থ হলে ক্ষান্তি দিয়ে বলি বাপু দৈবই এখন ভরসা

  বিশ্বাস করুন ডাক পেলাম অদ্ভুতভাবেসাদা চোখে দেখলে ব্যাপারটা কাকতালীয়আর অন্তরের চোখে দেখলে মনের গহনে এক ফোঁটা আশা হন্যে হয়ে খোঁজে রাস্তাহেঁয়ালি কথা ছেড়ে খুলে কাশিওষুধের দোকানে দেখা স্কুলের বন্ধু কালুর সাথেআমার জিজ্ঞাসা,ট্রেক করছে কিনা?উত্তর,তিন বছর পর অমরনাথ যাবে এবারচোখের সামনে ভেসে ওঠে,গম্ভীর গিরিশৃঙ্গ, নীল আকাশ,রহস্যঘন বনের গায়ে ভাসা মেঘ,ঘাসের সবুজের মাঝে নানা রঙের ফুল আর অনাড়ম্বর জীবনের স্রোতকালুদের সঙ্গে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করলে জানায়,আগে অনুমতি নিতে হবে অমরনাথ শ্রাইন(Shrine) বোর্ডেরসমস্ত ব্যাপারটা যা বুঝলাম তা বলি-অমরনাথ যাত্রায় যাবার আগে আপনাকে তাদের সাইটে মেডিকেলের নির্দিষ্ট ফর্মটা ডাউনলোর্ড করে প্রিন্ট নেবার পর বলে দেওয়া হাসপাতালে গিয়ে করে নিন নিজের মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষাডাক্তার বাবুরা ফর্মে রিপোর্টি লিখে সই ও ষ্ট্যাম্প করে দেবে এরপর আধার তিন কপি পাশপোর্ট ফটো আর টাকা নিয়ে চলে যান অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কেসব মিটলে টিকিট কেটেহর হর মহাদেববলে উঠে পড়ুন যানেঅমরনাথ যাত্রা শুরু ৩০জুনআর আমি যখন জানছি সেটা ১৭ মেতার ওপর দীর্ঘ সময় একা না বেরনোর অভ্যাস খুইয়ে সাহস কমেছে,   সঙ্গী ও পাইনিমনের ভিতর ভাঙা-গড়ার খেলা

   “এক বাণী করুণানিধন কি/ সো প্রিয় গতি ন আনকী

করুণাময় রামচন্দ্রের এই একই রীতি,যার আর কোন গতি নাই,অসহায়,সেই তার প্রিয়বাড়ি ফিরত পথে তিনি দেখিয়ে দিলেন ল্যাম্পপোষ্টে সাঁটা ছোট পোষ্টার  তুষারতীর্থ অমরনাথ যাত্রাজীবনে মাঝে মাঝে এই ভাবে মিরাকেল সবার ঘটেবাইক থামিয়ে দেওয়া নম্বরে ফোনও প্রান্ত থেকে তিনি সব শুনে ডাকলেন পরদিন,সঙ্গে  নিতে বললেন আধারের ফোটকপি আর চারটে পাশপোর্ট ফটোএককপি ফটো মেডিকেল ফর্মে লাগবে তিন কপি পরচিতেপরশু যাবো পরচির জন্য SBI ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ব্যস্তঅপেক্ষাআমরা যাবো বালতাল রুটে, পহেলগাঁও পথে পারমিশন পায়নি গ্রুপের বেশীরভাগ যাত্রীমনের আনন্দে অল্প বেসুরোতা হোক,ফিরবো পহেলগাঁও হয়ে শ্রীনগর ছুঁয়ে বৈষ্ণদেবীকে প্রণাম করেডাক এল ব্যাঙ্ক ম্যানেজারেরআমাদের যাত্রার তারিখ জেনে,ডায়রি দেখে জানালেন দশ তারিখে যাত্রার পরচি পাবোএরপর একশো কুড়ি টাকা কাউন্টারে জমাপরচি প্রস্তুত এবার টিকিট কাটাস্বপনদা ফোনে দেখে নিদান দিলেন-টা টিকিট আছে হিমগিরি এক্সপ্রেসে,বাড়ি ফিরে,অবশ্যই টিকিট কাটি

 নির্দিষ্ট দিনে গাঙ্গেয় বঙ্গের সমতল থেকে হিমগিরির অন্দরে প্রবেশের অধিকার নিয়ে চড়ে বসলাম ট্রেনেআপার সাইড বার্থসহযাত্রীদের ব্যাস্ততা-উদবেগ,নীচু-উঁচু,মোটা-মিহি,বিভিন্ন স্বরের রাগ-অনুরাগমুখ গুঁজে পড়ে থাকা প্রাত্যহিকের ঘেরাটোপ কাটার খুশির বাতাস মনেকাজ নামক প্রভুর দিন পনের থাকবে না শাসনভাবনার সুর কাটে পাশের কুপের এক যাত্রীর কথায়-এত বড় বস্তা সীটের নীচে ঢোকাবেন কি করে!আর একজন,আচ্ছা বেআক্কেল মানুষ আপনিবৈরাগ্য সুলভ হেসে,আক্কেলও আছে আর বস্তা ঢুকবে,আপনারা বাঙলায়,ইচ্ছে হলেই মুড়ি পান,আমি থাকি কাঠুয়ায়মুড়ির অভাব যে কি হয় তা মুড়িখোরেরা মর্মে-মর্মে বোঝে

  গাড়ি ছাড়বার অপেক্ষায়রাত বারোটাহ্যাঁচকা দিয়ে গাড়ি গড়ালোতালে তালে গতিওশহর ছেড়ে শহরতলির আলো-আঁধার পেরিয়ে গাঢ় অন্ধকারে জোনাকির লুকোচুরিগাড়ির ভিতর ক্রমশ শান্ত থেকে নিঃশব্দমাঝেমধ্যে মুখর রেলগাড়ি গতি-শব্দ আর নাকের গর্জনে

   দেবাশিষের ডাকে ঘুম ভাঙলোপাটনা স্টেশনপ্লাটফর্মে নেমে দুজনে চায়ে গলা ভিজিয়ে গাড়িতে ওঠাদুচার কথা সেরে দেবাশিষ গেল নিজের কামরাতে। সার্সি আঁটা জানলার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মাঠ-ঘাট,খেত-খামার,নদী-নালা,  নগর-উপনগর,মানুষ-যানবাহনস্বচ্ছ নীল আকাশের মেঘ সর্বদা সঙ্গী। সে অর্থে তীর্থযাত্রী আমি নই। তীর্থের ভেক নিয়ে হিমালয়ে... রঙ,রূপ,রসে মজিয়ে মনটা মেরামতের আশায়               

 ‘কোথায় যাচ্ছেন অমরনাথ? উল্টোদিকে বসা যাত্রীর কৌতূহলী প্রশ্নে- হ্যাঁ একা?না,ত্রিশ জনের গ্রুপ। আপনি?জিঞ্জাসা আমার। উত্তরে জানলাম উনি আম্বলা ক্যান্টনমেন্টে নামবেনসৈন্য-বাহিনীতে আছেননদীয়া জেলায় বাড়ি নাম দেবদত্ত মিত্রবিটলেমিতে পেল আমায়নামে তিনটে পদবী?মৃদু থেকে হো হো হাসির স্রোত,আসছি,  পাশের কামরা থেকে বন্ধুর খোঁজ নিয়ে

 অমরনাথ যাত্রায় যাচ্ছি শুনে পরিচয় হোল আরও চার সহযাত্রীর সঙ্গে ছন্দাদি অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপিকা একা ঘুরে বেরানোটা ওনার নেশাদলবেঁধে ঘুরতে উনি ভালবাসেন নাঅবিবাহিতহিমালয় ওনার প্রথম পছন্দঅমরনাথে চারবার এসেছেনতিনবার দর্শন হয়েছেপহেলগাঁও পথে দুবার একবার বালতালের পথেএবার আবার পহেলগাঁও পথেবালী থেকে বিকাশবাবু,স্ত্রী ও বাব-মা কে নিয়ে বালতাল পথে আমাদের সহযাত্রীআর একজন আপারবার্থ থেকে কচিৎ কখন ও নেমেছেন,কানে হেড ফোন লাগিয়ে মোবাইলে কিছু দেখে চলেছেন অথবা কথা বলছেন ফোনে

  আপনারা কি হেঁটে উঠবেন?আমার প্রশ্নে বিকাশবাবু জবাব,না,আমরা দুজন ঘোড়াতে যাবমা-বাবা ডুলিতেপ্রতি প্রশ্নে জানায়,ইচ্ছেতো হেঁটে ওঠার,কি হবে জানি নাবালতাল হয়ে যাবো শুনে ছন্দাদি বললেন,অমরনাথে রাত্রিবাস যদি করেন তাহলে ঠিক আছে,নচেৎ বেশ কঠিনঅবশ্য হাঁটুর জোর থাকলে,অসম্ভব নাবিনয়ী জবাবহ্যাঁ থাকবো,গুলজার হোলি ক্যাম্পে আর হাঁটা অভ্যাস আছে আমার.দিদি হেসে,তাহলে পারবেন।চা গরম,গরম চায়ে,শুনে চা খাবেন তো সবাইদিদির প্রশ্নে বিকাশবাবুর স্ত্রী ভারতী জানালেন,উনি চা খান না

  চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে মেসোমশায়ের দিদিকে প্রশ্ন-অমরনাথের পৌরাণিক গল্পে শুকপাখি কি পায়রা? কেউ নিশ্চয় বলেছে আপনাকে পবিত্র গুহায় পায়রা দেখলে জীবন সার্থকহাল্কা হাসির ঝিলিক খাওয়া ঠোঁটে এ ব্যাপারে জ্ঞান-গম্যি একদম নেই মেসোমশায়,তবে শুকপাখি পুরাণ বা রূপকথায় লেখক বা কবির কল্পনা,বাস্তব অস্তিত্ব আমার জানার বাইরেচায়ে চুমুক দিয়ে,তবে পায়রা গুহার বাসিন্দা অনেক দিনেরভগিনী নিবেদিতার লেখাস্বামীজিকে যে রূপ দেখিয়াছি বইয়ে বলেছেন,আর এখন গুহা প্রবেশ করিয়া তাঁহার বোধ হইল,যেন মহাদেব সশরীরে তাঁহার সন্মুখে বিদ্যমান।অসংখ্য যাত্রী কোলাহল করিয়া দলে দলে গুহা প্রবেশ  করিতেছে এবং মাথার উপরে পারাবতকুল ঝটপট শব্দ করিয়া উড়িতেছেস্বামী বিবেকানন্দ এসেছিলেন ২৯,জুলাই ১৮৯৮১২৫ বছর আগে যখন গুহায় পায়রার হদিস পাচ্ছি মানতে অসুবিধা নেই আমারপায়রা হয়ত পুরাণকারের কল্পনায় শুক।’‘দিদি,স্বামী অভেদানন্দও তো এসেছিলেন?ভারতীর প্রশ্নে,হ্যাঁ,স্বামী অভেদানন্দএসেছিলেন ১৯২২এ,উত্তর দিদিরশুনেছি মহর্ষি ভৃগু,আদি শঙ্করাচার্য অমরনাথ গুহা দর্শন করেছিলেনমন্তব্য আমার।হাল্কা হাসি ঠোঁটে,বাঁহাতে বাঁধা ঘড়ি দেখতে দেখতে হ্যাঁ, এছাড়া গুরু নানক,স্বামী রামদাসও স্বামী রামতীর্থ,শৈবধারার সাধক স্বামী বিদ্যাধর, পঞ্চদশ শতাব্দীর কাশ্মীরের শাসক বাদশাহ জয়েন-উল-আবদিন,প্রবোধকুমার সান্যাল ওনাকে বলেছেন দৈতকূলে প্রহ্লাদথাক সে কথাজম্বু-কাশ্মীরের বিখ্যাত সাধক ভগবান গোপীনাথজীগোপীনাথজীর সঙ্গে আবার বাংলার যোগ আছে জানেনসবার অনুসন্ধিৎসু চোখে ভ্রূকুটি দেখে দিদি,ব্যাপারটা কথিত,ভগবানের জন্মের দিনে (৩জুলাই১৮৯৮) স্বামী বিবেকানন্দ নবজাতককে আর্শীবাদ করে আসেন                                                  তারপর?আমাদের প্রশ্নের জবাবে দিদি হাসতে হাসতেতারপর আবার কি? ওইটুকু জানিতবে যদি কাশ্মীর,অমরনাথের ইতিহাস শুনতে চান বিকেলে বলবো। বিকাশবাবু সম্মতির ঘাড় নেড়েনিশ্চয় শুনবো,কাগজে পড়া বুটা মালিকের গুহা আবিষ্কার ছাড়া কিছুই তো জানি না   

   বিকেলে চা পর্ব চুকিয়ে শুরু হল প্রবাদ আছে এই কাশ্মীর উপত্যকা ছিল জলের নীচে, নাম ছিল সতীসর। সেখানে দৈত্যদের বাস মানুষজন দৈত্যদের ভয়ে থাকত ভীত-সন্ত্রস্ত। ব্রহ্মা পুত্র কশ্যপ এই দোর্দন্ড প্রতাপ দৈত্যদের বধ করেন মহামায়াকে তপস্যায় তুষ্ট করে। এই জলমগ্ন উপত্যকাকে উনি করে তুললেন সুজলা সুফলা মনুষ্য বসবাসের  উপযোগী ক্রমে  দলে দলে মানুষ বাস জমালো সতীসরেমহর্ষি কশ্যপের নামে নতুন উপত্যকার নাম হল কশ্যপমার বা কশ্যপমীর।এরপর নাগরাজ তক্ষকের হাতে শাসন ভার তুলে দিয়ে মহর্ষি  কশ্যপ ফিরে গেলেন অযোধ্যায়। কশ্যপমার হল আজকের কাশ্মীর।অনেকে বলেনকাশ্মীর   শব্দটি প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা কাসমীরা থেকে এসেছে।কাস্‌মীরা শব্দের স্থানীয় ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল জল থেকে উদ্ভূত ভূমিনীলমত পুরাণের বক্তব্য প্রায় এক্ই রকম।    

  বহু বছর কেটে গিয়েছে,কশ্যপমারের মানুষ সুজলা সুফলা প্রকৃতির দানে সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ন।পরিব্রাজক ঋষি ভৃগু উপস্থিত হলেন সেখানেপ্রচার করলেন অমরেশ্বের শিবের অমরকথাশ্রাবনী শুক্লা চতুর্থীতে তার দেওয়া দেবদণ্ড(ছড়ি) সামনে নিয়ে যাত্রা শুরু করবার বিধান দিলেন।দেবদণ্ড হাতে থাকলে পথ হবে বিপদমুক্ত।আর বললেন শ্রাবনী পূর্ণিমার পূর্ণলগ্নে অমরেশ্বরের দর্শনে মানুষ পাবে অমরত্ব।কিছুকাল পর মানুষ এই কঠিন যাত্রার কথা গেল ভুলে এর পর এলেন জগদগুরু শঙ্করাচার্য।কাশ্মীরের বিখ্যাত পণ্ডিত মুন্ডন মিশ্রকে তর্কে পরাজিত করে তাঁকে নিয়ে দেবদণ্ড হাতে অমরনাথ দর্শনের পর থেকে পুনরায় শুরু হল যাত্রা।আগে ছড়ি যাত্রা বা ছড়ি মুবারক হতো অমৃতসর থেকে,ডোগরা শাসনকালের      প্রথম দিকে ছড়ি যাত্রা স্থানান্তরিত হয় শ্রীনগরে।অমৃতসরের আগে হতো মধ্যপ্রদেশ থেকেবর্তমান শ্রীনগরের দশনামী আখড়ার দায়িত্বে ছড়ি যাত্রা চলে

 তাহলে মেষপালক বুটা মালিক? ভারতীর প্রশ্নে,দিদি বললেন, ওটা আধুনিক কথ্য ইতিহাস,তার আগে আরো কিছু তথ্য আছেসম্রাট আকবরের সভাসদ সুপন্ডিত আবুল    ফজল তাঁর আইন--আকবরী গ্রন্থে বিশদ বিবরণ দিয়েছেন অমরনাথ যাত্রারসম্রাট ঔরঙ্গজেবের কাশ্মীর ভ্রমণকালে সফরসঙ্গী চিকিৎসক ফ্রাঁসোয়া বার্ণিয়ের ট্রাভেল ইন দ্যা মুঘল এম্পায়ের বইয়ে উল্লেখ করেছেন অমরনাথ গুহায় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের পূজার কথাআফগান শাসনকালের শেষের দিকে,১৮১৯ খ্রীষ্টাব্দে ধর্মপ্রাণ ধনী পণ্ডিত হরদাস টিকু তীর্থযাত্রীদের জন্য সারা জীবনের জমানো দু-লক্ষ টাকা খরচ করেন অমরনাথ যাবার পথ,থাকার জায়গা,খাদ্যের ব্যবস্থা করতেএরপর ১৮৩৫-১৮৩৮ কাশ্মীর ভ্রমণ করেন ব্রিটিশ শাসক পরিব্রাজক গডফ্রে টমাস ভিগনে১৮৪২ এ প্রকাশিত হল তাঁর লেখা Travels in Kashmir, Ladak, Iskardoসেখানেও তিনি দিয়েছেন অমরনাথ গুহার বিবরণ

 এবার আসি বুটা মালিকের কথায়জনশ্রুতি তিনি অমরনাথ গুহার পুনঃ আবিষ্কার করেনভেড়া চড়াতে- চড়াতে তিনি আশ্রয় নেন গুহায়গুহাতে এক সাধু তীব্র ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পাবার জন্য তাকে দেন জলন্ত কয়লার কাঙরীবাড়ী ফিরে তিনি দেখেন কাঙরীর কয়লা রূপান্তরিত হয়েছে সোনায়আনন্দিত বুটা সাধুকে ধন্যবাদ জানাতে আবার ফিরে যান গুহায়কিন্তু সাধুকে তিনি খুঁজে পেলেন না,বদলে দেখেতে পান বরফের শিব লিঙ্গঅদ্ভুত এই ঘটনা তিনি প্রতিবেশিদের শোনালেনপ্রচার হল গুহার মাহাত্মঘটনাটা ১৮৫০এর বলে অনেকে মনে করেনউনারা তীর্থ যাত্রীদের পথ দেখিয়ে শুধু নিয়ে যেতেন না,তীর্থ যাত্রীদের মন্ত্র পড়িয়ে করাতেন গুহায় বরফানি বাবার পূজাওবর্তমান তাঁদের বংশধরেরা পহেলগাঁও এর বাটাকোটের বাসিন্দাবুটা মালিকের প্রপৌত্র গুলাম নবি মালিকের পৌরহিত্যে ১৯৪৭ রানি তারাদেবী (মহারাজা হরি সিংএর স্ত্রী)অমরনাথ গুহায় করেছিলেন অমরেশ্বর শিবের পূজাস্মারক হিসাবে রানী ওনাকে উপহার দেন মাজমা(খেজুর ভর্তি তামার ট্রে)সান্মানিক অর্থ হিসাবে ওনারা এক তৃতীয়াংশ ভাগ পেতেন পূজার প্রনামীর২০০০ সালে গঠিত হয় সরকার পরিচালিত অমরনাথজী শ্রাইন বোর্ডএরপর শ্রাইন বোর্ডের নিয়ন্ত্রন চলে সব কিছু     

  পরিষ্কার হল না দিদি, ১৮৪২এ প্রকাশিত গডফ্রে টমাস ভিগনে বই বলছে অমরনাথ     গুহার কথা।১৮১৯এ বললেন পণ্ডিত হরদাস টিকুর কথা।এই বছরে মানুষ ভুলে গেল!গুহার কথা যাকে আবার পুনরাবিষ্কার করতে হল? হতে পারে কারন আত্মবিস্মৃত জাতি আমরা,আবার না হতে পারে হাসিমুখে সব বির্তকে আমি নেই,ওসব ঐতিহাসিকদের কাজমেনে নিলে,পরিশ্রম কম

   ঘনায়মান সন্ধ্যামাথার ভিতর তথ্যের গজগজানির সঙ্গে মানসিক আতঙ্কপ্রাকৃতিক দূর্যোগে অনেকবার ভন্ডুল হয়েছে যাত্রা,এমনকি কাছাকাছি পৌঁছেও বিনা দর্শনে ফিরে আসতে হয়েছে যাত্রীদেরসন্ধ্যার আলো-আধাঁরির মতোই এই যাত্রা  অনিশ্চিত আশঙ্কায় ভরা

  জম্বু-তাওয়াই নামলাম বেলা দেড়টাতাওয়াই হল মূল নদী, মন্দির নগরী জম্বুরআমরা এখন যাবো বৈষ্ণোদেবী শ্রাইন বোর্ড পরিচালিত আস্তানাতেরেল ওভার ব্রীজ পেরিয়ে এক নম্বর প্লাটফর্ম ফেলে রাস্তামিনিট দুয়েক হেঁটে ডানদিকের বাঁক ঘুরে বৈষ্ণবী ধাম, কালিকা ধাম সরস্বতী ধামআমরা থাকবো সরস্বতী ধামেঅনলাইন বুকিং ছিল বলে সিকিউরিটি চেকিং পরে লিফটে করে পৌঁছে যায় চারতলাতেষোল বেডে্র ডর্মিমহিলাদের থাকার ব্যবস্থার জন্য অন্য রুম ছাড়া এসি ডর্মি ,ডাবল বেড,ট্রিপেল বেড  এসি নন-রুম পাওয়া যায়যে যার নিজের বিছানার দখল নিয়ে স্নানপর্ব সেরে ক্যান্টিনেহরেক রকম নিরামিষ পদ থেকে পছন্দের খাবারের দাম মিটিয় কুপন সংগ্রহএরপর খাবার পরিবেশনের জায়গায় কুপন জমা করলে খাবার

 পেট পুজা সেরে দেবাশিষ,সংগ্রামদা,পঙ্কজদা আমি স্থানীয় কিছু দ্রষ্টব্য থাকলে দেখব বলে রাস্তায় নামিসামনে আটো স্ট্যান্ডে জিজ্ঞাসায়,উত্তর আসে রঘুনাথ মন্দির,শিব মন্দির আরো কিছু নাম বলেছিলেনভাড়া আস-যাওয়া দু-হাজার টাকাযখন শুনলো আমাদের সন্ধ্যার আগে ফিরতে হবে তখন প্রস্তাব এল বাগ--বাহুর আসা যাওয়া দেড় হাজার লাগবেএগিয়ে আর এক জনের সঙ্গে দাম করলে ভাড়া কমলো অস্বাভাবিকসন্দেহ হওয়াতে সামনের জে কে পুলিশকে জিজ্ঞাসা হেঁটে সামনের রাস্তা থেকে বাস ধরবার পরামর্শ দিলেন উনিবাস কন্ডাক্টারকে বাগ ই বাহু-র কথা বললে,যেখানে নামাবে সেখান থেকে অল্প হাঁটলে পৌঁছে যাবো গন্তব্যে

  বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের দেখা নেইবাধ্য হয়ে হাঁটাবাসের আশায় মাঝে মাঝে পিছনে তাকানোএকসময় আশা ছেড়ে গতি বাড়ালো হাঁটারসেনা বাহিনির অফিস-কোয়াটার-ব্যারাক পিছনে রেখে রাস্তা এবার চড়াইতাওয়াই নদী অনেক নিচে সাপের মত বয়ে চলেছেমোটামুটি চার কিমি যাত্রা শেষে বিরাট হনুমান  মূর্তিখাড়া রাস্তার শেষে বাগ ই বাহুডান পাশের রাস্তা খাড়া উঠেছে বাগ ই বাহু ফোর্টেফোর্টের ভিতর কালী মন্দিরস্থানীয় নাম বাওয়ালি মাতার মন্দিরবাগ ই বাহু বাগানের প্রবেশ মূল্য দশ টাকাএছাড়া ফাউন্টেন শো,অ্যাকোরিয়ামে মাছ দেখার জন্য দর্শণী আলাদাটিকিট কাটতে যাবো,পঙ্কজদার চিৎকার,টিকিট কাটবেন না,এখুনি ফিরতে হবেস্বপনদার ফোন,সাড়ে সাতটার মধ্যে এসে যাবে আমাদের যাত্রার বাসকাল সকালে নয়,আজি রাতেই রওনা দিতে হবে বালতালের জন্যসামনে চায়ের দোকানে চায়ের চুমুক শেষ করে অটো-হাঁটা-লিফট-চারতলাস্যাক পিঠে নীচেফুটপাথে অপেক্ষাবাস এলে পিছনের ডিকিতে স্যাক রেখে জানলার ধারে সিট দখলশহরের মধ্যে  দিয়ে ধীর গতিতে এগোচ্ছে বাস,কখনো থামছে সিগন্যালে,আবার চলছেহঠাৎ বাসের ইজ্ঞিন স্তব্ধসামনে যতদূর চোখ যায় পরপর গাড়ীপ্রথমে ভেবেছিলাম জ্যামসি আর পি এফ কথায় নিজেদের লাগেজ নিয়ে নামলাম গাড়ী থেকেস্বপনদা জানালো চেকিং হবে,সবাই আধার আর পরচি হাতে রাখবেনবাস থেকে নেমে হাঁটালাইনে দাঁড়ানোসাপের মত আঁকা-বাঁকা লাইনের কোথায় মুখ কোন রকম আন্দাজ করা মুশকিলশামুকের গতিতে এগোচ্ছে লাইন আর সময় ছুটছে ঘোড়ার বেগেরাত ১১টা নাগাদ আধারপরচি চেকিং করে প্রত্যেকের হাতে ধরানো হচ্ছে বিশেষ ব্যাচ যেটা গলায় ঝোলাতে হবেএরপর ল্যাগেজ পরীক্ষার লাইনধীর গতিযখন সেখানে পৌঁছালাম তখন সময় ও শরীর দুটোয় বারোটার ঘরেপ্রথমে যন্ত্র দিয়ে চেকিং,সন্দেহ হলে ব্যাগ খুলে দেখাতে হবেএরপর হাঁটতে হাঁটতে বাস স্ট্যান্ডগরম আর খিদেয় শরীর অবসন্নস্ট্যান্ডের উল্টোদিকে লঙ্গরে খান চারেক ঠান্ডা চিমড়ে লুচি সামান্য তরকারী দিয়ে উদরপূর্তি করে বাসস্ট্যান্ডে আমাদের বাসের সামনে মাঠে কাগজ পেতে অপেক্ষাসব গাড়ী ছাড়বে একসঙ্গে রাত তিনটে নাগাদসাড়ে তিনশো-চারশো কিমি যাত্রাপথ

  জানলার পাশে সিট আমারট্রেনের ধকল,সারাদিনের ছুটোছুটি,এরপর আছে চিরবিরানি গরমে নেতানো শরীরজেগেছিলাম তাওয়ায় নদীর সেতু পেরোনো পর্যন্ত এরপর নিদ্রার গ্রাসেরাতের অন্ধকার আর ভোরের আলোর সন্ধিক্ষণে চোখ খুলে দেখি পাহাড়ের মাথায় বিশ্রাম নেওয়া মেঘেদের আরমোড়া ভাঙাঘুমন্ত বাড়ি ঘরের বাগানে লাল হলুদ গোলাপী সাদা ফুলের বাহারকোথাও সবুজ মখলমী পাহাড়কোথাও ধস নামা পাহাড়ে ধূসর খতদু-একটা ঘুম ভাঙা পাখীর অলস ডানা মেলেছে আকাশেপাখীর কূজন শোনবার জো নেই গাড়ীর একঘেয়ে শব্দেহিমেল উতলা বাতাসে শরীরে কাঁপন লাগলে কোলের ওপর রাখা উইন্ড-চিটার পরে জানলা টেনে সার্সিতে চোখ রাখিবাসের ভিতরে তখনো কারো ঘুম ভাঙ্গেনিপথের দেবতাকে প্রণাম জানায় এমন আবেশ লাগা ভোরের সাক্ষী করার জন্য

 বিরাট প্রান্তরের পাশে বাস থামলনেমে আসি বাস থেকেরাস্তার একপাশে পাহাড়,আরেক পাশে বিরাট মাঠমাঠের একদিকে গোটা কুড়ি-বাইশ খাবারের ভান্ডারা,আট-দশেক মেডিক্যাল ক্লিনিকঅন্যদিকে শৌচাগারসর্পিল রাস্তা জুড়ে বাস,ছোট গাড়ী,মাঝে-মাঝে সি আর পি এফ ভ্যানআমাদের নিরাপত্তায় সেনা-বাহিনী,-আধা-সেনাবাহিনীর চেষ্টায় কোন ফাঁকফোকর নেয়বরাদ্দ সময় পৌনে এক ঘন্টা,অতএব দ্রুততার সঙ্গে খাওয়া অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে হবেপ্রতি কাঊন্টারে লম্বা লাইন
সব শেষ হল যখন এক ঘণ্টা সময় অতিবাহিতঘনঘন বাঁশি আরচ্যালিয়ে-চ্যালিয়েআধাসেনার বুলিতে ত্বরানিত হল বাসে ওঠবার বেগসারিবদ্ধ গাড়ির আবার চলা রাজকীয় চালেতিনমাথা,চারমাথার মোড়ে দেখতে পাই সমস্ত রকম যানবাহন,এমনকি পথচলা মানুষকে সেনারা আটকে রেখে যাত্রা-যানকে করে দিয়েছে পথএটা তাহলে যাত্রা করিডর!ভীষন বাসের বেগপথের পাশে পাহাড়ের খাঁজে,দোকানের-বাড়ীর-হোটেলের ছাদে,গাছের ডালে,রাস্তার ধারে ফুট দশেক অন্তর আধা সেনা আগ্নেয় অস্ত্র হাতে মোতায়ন যাত্রী প্রহরায়
বানিহাল ট্যানেল পেরিয়ে বেশ অনেকটা যাবার পর দুপাশে আকাশছোঁয়া সবুজ পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সংকীর্ণ রাস্তাঘন নীল আকাশে ভেসে যাওয়া সাদা ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘঅপার্থিব সৌন্দর্যের মধ্যে ছন্দপতনধস নামার জন্যে আপাতত যাত্রা স্থগিত,    যতক্ষন না রাস্তা খোলেএখন সেনা ব্যারাকে- স্নান,মধ্যাহ্ন ভোজনযদি রাস্তা না খোলে রাতের নিদ্রাও হবে এখানেসেনা ব্যারাকে ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রামহঠাৎ গুঞ্জন  রাস্তা খুলেছেদেবাশিস খোঁজ নিয়ে জানাল সবাই এগোচ্ছে বাসের দিকেসুন্দর পরিবেশ সঙ্গে ক্লান্তির জন্য ইচ্ছে ছিল এখানে এক রাত কাটাতেশঙ্কা জাগে মনে,নিজের ইচ্ছা গুলো ঠিক ঠিক মিলছে না বলে জম্বুতে না দেখলাম বাগ বাহু,আর এখনেও কাটানো গেলোনা একটা রাতঅমরনাথ গুহা দর্শন হবে তোসকলে দুপুরের খাওয়া সাঙ্গ করে হাঁটছি বাসের উদ্দ্যেশেকিলোমিটার খানেক হেঁটে  দর্শন মিললো বাসেরআবার পথ চলা শুরুঘড়ির কাঁটা বেলা এক ছুঁই ছুঁইবাসের বেগ আগের থেকে তীব্রতীক্ষ রোদের তেজ বাধ্য করল জানলার পর্দা টানতেআধো অন্ধকারে ভাত ঘুমের আমেজঘন ঘন বাঁশির আওয়াজে ছুটল নিদ্রাবাস দাঁড়িয়ে আছেবেশীর ভাগ সিট ফাঁকাউঠে দরজার কাছে যেতে স্বপনদা চেঁচিয়ে—‘আপনার এক্সট্রা লাগেজ থাকলে দিয়ে দিনরামদা সব নিয়ে শ্রীনগরে যাবেরামদা রাঁধুনীবাস থেকে নেমে ডিকিতে থাকা অতিরিক্ত মাল পত্তর রাখা ছোট স্যাকটা যথাস্থানে রেখে আবার বাসেআধাসেনার বাঁশি বাজছে সমানেদু-জন সেনা এগিয়ে এসে গরু তাড়ানো করে সবকে বাসে তুলে  নির্দেশ দিলেন বাস ছাড়বার

  সাড়ে চারটা নাগাদ সোনমার্গরাস্তার পাশ দিয়ে খরস্রোতা নদীনদীর ওপারে খাড়াই পাহাড়।পাহাড়ের ঢালুতে পাইন বন।সংগ্রামদা জানালেন নদীর নাম সিন্‌ধসিন্‌ধ না সিন্ধু?আমার প্রশ্নে–‘সিন্ধু নদ,এসেছে তিব্বতের অধুনা চীনের মানস সরোবরের কাছাকাছি ঝর্ণা ও সেংগে জাংবো(সেঙ্গে খাবাব) নদীর মিলন স্থল থেকে যা কারাকোরাম ও হিন্দুকুশ পার্বত্যভূমিতে বাধা পেয়ে গিলগিটের কাছে ভারতবর্ষ ছেড়ে প্রবেশ করেছে পাকিস্থানেঅমরনাথ থেকে উৎপন্ন অমরগঙ্গা বালতাল উপত্যকা ছুঁয়ে শোনমার্গের বিভিন্ন হিমবাহের গলা ঝর্ণার জলে পুষ্ট হয়ে সিন্‌ধ নামে বয়ে মিশে যায় ঝিলমে।


   চলতি বাস থেকে ক্যামেরায় চোখ রেখে তুললাম কয়েকটা ফটোপথের  সৌন্দর্য এতই তীব্র ক্যামেরা ছেড়ে দুচোখ ছড়িয়ে দিলাম নীল আকাশ,সবুজ পাহাড়ের গায়েসিন্ধের জল ফণা তুলে নদী গর্ভের বড় বড় বোল্ডারে মাথা ভিজিয়ে কখনো দুপাশ দিয়ে ছলছল,কলকল ডাক দিয়ে যায়মাঝে মাঝে রাস্তা কাটে ভেড়ার পালনদীর ওপারে ছোট ছোট গঞ্জছবির মত ঘর-দুয়ারনদীর ধারে  দাম্ভিক সভ্যতার ইলেট্রিক পোষ্টপ্রকৃতির রোষানলে দু-চারটে খুঁটি নদী বক্ষে শায়িতনদীকে সাথী করে ডানদিকের রাস্তায় নীচের দিকে নামছে বাসবাঁদিকে জাতীয় সড়ক দ্রাস-কারগিল হয়ে পৌঁছেছে লে-লাদাখ

 মেঘ চোঁয়া সোনালী আভায় জলে স্থলে পাইন বনে হিমালয়ের অনন্ত ঐশ্বর্যের পরমাশ্চর্য রূপনদীর রোদ-তাতা জল ক্লান্তি ধুয়ে শীতল হবার উদ্দীপনায় প্রানের উচ্ছ্বাস প্রকাশে আমরাও ক্রমশঃ ঠান্ডা থেকে শীতলগরম জামা উঠল গায়ে কান-গলা চাপা পড়লো মাফলারেপাইন বনে ফিসফিসানি নদীর সাথে সখ্যতা তার নিবিড়বহুদূরের নিঝুম উপত্যকার শেষে সোনালী বর্ণের অচেনা হিম-শিখর হিমালয়ের পথে-ঘাটে এই রকম অচেনা নানা  বৈচিত্র মিটিমিটি হেসে হাতছানি দেয়এই রহস্যে মোরা মাধুর্যেকে দেখতে যুগ যুগ ধরে নেশাগ্রস্ত মানুষ কাছে আসে তাঁর   

  বাস হঠাৎ গেলো থেমেদিনের আলো নিভন্তনদী,পথ থেকে সরে গিয়েছে দূরে  সামনে গাড়ীর সারিপথের একপাশে কাজ চলছে জোজিলা ট্যানেলেরদূরে আলোর রোশনাইস্বপনদা জানালো এক কিমি মত হাঁটলে বালতাল বেস ক্যাম্পআগে গেলে তাঁবুটা ঠিক-ঠাক মিলবেমোটর-যানের পাশ দিয়ে কিছুটা হাঁটার পর চলার পথঅন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ী যাবে বাস-স্ট্যান্ডেডাইনে-বাঁয়ে,সামনে-পিছনে আকাশ ছোঁয়া  পাহাড়ডান দিকে পাহাড়ের গা কেটে লে-লাদাখ জাতীয় সড়কডান বাঁয়ে পাহাড়ের নীচে জোর কদমে কাজ চলছে জোজিলা টানেলেরউৎরায়ে নেমে সরু নালা টপকে বালতাল বেস ক্যাম্পের প্রথম তোরণতোরনের সামনে দু-চারজন আধাসেনা প্রবেশের বাঁদিকে-ডানদিকে প্রশাসনিক সেনা-বাহিনীর,শ্রাইন-বোর্ডের তাঁবুএরপর বিশেষ অতিথিদের তাঁবুবেশ কিছুটা ছেড়ে বিভিন্ন টুর অপারেটর লাক্সারি তাঁবুবাঁদিকে খাদ তারপর হাল্কা সমতলকে ভাগ করেছে খরস্রোতা অমরগঙ্গাওপারে পাহাড়ী জঙ্গলডানদিকে সারি সারি ভান্ডারার স্টলপিছনে ভান্ডারার কর্মীদের থাকার তাঁবু সারি সারি শৌচালয়দ্বিতীয় তোরণ পর আম জনতার থাকার তাঁবুএখনে আমাদের ব্যাগ,পরচি,আধার চেকিং হল সবএরপর আবার লাইনে দাঁড়ানোচেকিং হল ব্যাগ এবং শরীরেরএর পর তাঁবুর কাছে পৌঁছানো

  স্বপনদা আগে এসে ঠিক করে রেখেছিল তাঁবুভাড়া জনপ্রতি পাঁচশো টাকা প্রতিদিনপ্রসঙ্গত তাঁবু ভাড়া ফিক্সড নয়, অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী বাড়ে-কমে নিজেদের বিছানার দখল নিয়ে,চায়ের খোঁজে বেড়ানো।  


 
বৈদুতিক আলোয় ভাসা বালতাল উপত্যকা মুখর নানা প্রদেশের মানুষেসবার  গলায় জয় ভোলেস্থানীয় মানুষের পথের পাশে বসেছে খাবার,গরম-পোশাক,জামা কাপড়,চায়ের,নিত্য---প্রয়োজনীয় জিনিস,জুতোর এমন কি ট্যাটু করবার দোকন সাজিয়েবেস হাসপাতালের পাশে পুরনো হেলিপ্যাডহেলিপ্যাডের পর বিরাট মাঠ,মাঠ ছাড়িয়ে বাসস্ট্যান্ডচোঁয়ানো আলোতে নদীর তরঙ্গে ঝিকিমিকিনদীর ওপারে অস্পষ্ট আলোয় বৃক্ষের অবয়বমাইকে শিবের ভজনমাঝে মাঝে গান থামিয়ে জয় ভোলে বলে,ঘোষণা হচ্ছে কিছু না কিছু জরুরি সূচনা অথবা-কেউ যদি অসুস্থতা বোধ করেন, অব্যশই হাসপাতাল বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে নেবার অনুরোধ   

  আমরা চা খেয়ে,ভান্ডারার প্যান্ডেলে ঢুকে ঢুকে রাতের খাবারের পছন্দের মেনুর খোঁজেএক ভান্ডারাকে চিহ্ণিত করে প্রথম তোরণের দিকে এগিয়ে চলিভিড় এদিকে কমতোরণের কাছে আধা সেনা পথ রোধ করে আমাদের ফিরিয়ে দিলেনআমাদের বাংলা ভাষা শুনে এক জওয়ান কলকাতা থেকে?প্রশ্নের উত্তরে জানাই,না আমরা হাওড়া থেকে’‘আপনি? বর্ধমানওনার কাছে জানলাম পঃবঙ্গের অনেক জওয়ান আছে এবার ডিউটিতেচিহ্ণিত ভান্ডারা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়ে পঙ্কজদার কথায় ঢুকে পরলাম জয় মহাদেব সেবাদার চ্যারিটেবিল ট্রাস্টের ভান্ডারার অন্দরেআয়োজন বেশ জমকালোঘি মাখনো রুটি,ছোলার ডাল,ফুলকপির তরকারী,হালুয়াভান্ডারার বাইরে পরিবেশিত হচ্ছে কেশর দেওয়া গরম দুধকিন্তু,কিন্তু করে শেষমেশ একগ্লাস গরম দুধ খেয়ে রওনা নিজেদের ডেরায়

  তাঁবুতে, জোর কদমে আড্ডা হাসি-ঠাট্টাদেবাশিসের মোবাইলে আমার বাড়ী থেকে ফোনকোথায় আছি?সবাই ঠিক আছি কিনা? এই সব অদ্ভুত প্রশ্নের কারন জানতে চাইলে শুনি সমস্ত সংবাদ চ্যনেলে দেখাচ্ছে অমরনাথ মন্দিরের কাছে ফ্লাশ-ফ্লাডে ভেসে গিয়েছে তাঁবু তীর্থযাত্রী রাস্তা-ঘাটএরপর অন্যদের বাড়ী থেকেও উৎকণ্ঠার ফোনস্বপনদা বাইরে গেলেন কি ব্যাপার বুঝতেদু-চার মিনিট বাদে মাইকে ঘোষণা বাজলো কালকের যাত্রা স্থগিতমনের অবিশ্বাস ভাবটা তখন কাটেনিঅমরনাথ গুহা থেকে মাত্র পনের-ষোল কিমি দূরে আমাদের অবস্থান,অথচ প্রকৃতিতে তার কোন প্রকাশ নেইবাইরে উৎকণ্ঠায় সকলে,চেষ্টা করছে খবর নেবারকোন সঠিক খবর কারো কাছেই নেইবারং বার মাইকে সূচনা পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত যাত্রা স্থগিত

 পরদিন তারিখ,সকালে উঠে অমরগঙ্গা তীরে পৌঁছানোর মতলব নিয়ে শুরু করি হাঁটাসঙ্গী সংগ্রামদা,পঙ্কজদা আর দেবাশিসযাবার রাস্তায় ভাণ্ডারেতে গরম প্যাটিস-চা গলাধকরন করে নদীর কিনারায়কলকল জলের শব্দকিনারায় ঘাসে চোখ বুজে বসে,একমনে নদীর ডাক শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে শরীর নদীর তরঙ্গে ভাসতে ভাসতে কোথাও যেন চলেছেনদীর দুপাশে চেনা অচেনা মুখগুলো অস্পষ্ট হতে হতে এক সময় একাকিছুতেই থামতে পারছিনাচরম অস্বস্তিতে চোখ খুলে অমরগঙ্গার পাশ দিয়ে হাঁটানদীর ধারে যাত্রীদের ঢলপায়চারী,ঘাসের ওপর বসে গল্প,সেলফী, ছবি তোলা  কিছু না কিছুতে সক্রিয় সকলেনদী বরাবর সোজা যতদূর দেখা যায় একপাশে পাহাড়ী অরণ্যঅন্য পাশে কিছুটা সমতল,তারপর যাত্রী-ক্যাম্প,শেষে উঁচু পাহাড়শ্রেণীসেই পাহাড়ের গা-বেয় কার্গিল-লে যাবার রাস্তাআর দৃষ্টি যদি নদী বরাবর সোজা এগোয় তা হলে দিগন্ত মেঘের দখলে ধূম্র-ধূসড়কাল ক্যাম্পে আসবার সময় চোখ ঠেকেছিল তুষার ঢাকা এক শৃঙ্গ,যার মাথায় পাতলা মেঘে চাপা অস্তমিত সূর্যের সিঁদুরের টিপ


  ব্রিজ টপকে অন্য পাড়ে এলাম-পাড়ে সমতল অংশ কমপাহাড়েব ঢালে বিভিন্ন গাছ,আর পাখির কূজন সঙ্গে অমরগঙ্গার কল কল রবসবুজ মখমলি ঘাসের মাঝে ছোট ছোট সাদা-হলুদ ফুলের রঙের ছটাহিমালয়ের পরিবেশ ফুল,পাতা,পাখী, নদী সবাই মিলে ভিন্ন বেশে ভিন্ন সুর তুলে অনুভূতির বৈচিত্র সৃষ্টি করে কণ্ঠে ভাসে, হৃদয় আমার চায় যে দিতে,কেবল নিতে নয়.

 যাত্রী ভীড় কম এপারেগাছের ছায়াতে ঘোড়ার সহিসদের আড্ডাইতস্তত চড়ে বেরাচ্ছে তাদের শীর্ণ অশ্বকুলআমরা ক্যামেরা নিয়ে ইতস্তত পায়চারী করতে করতে বন্দী করছি খন্ডচিত্রভাগ্যিস এই অঞ্চলে এখনো বীরদর্পী বহুতল নির্মাণ হয়নিতাই মায়া মাখা শিশু সাদা মেঘের দল নির্ভয়ে আকাশের বুকে,পাহাড়ের চূড়ায় ভেসে ভেসে লুটোপুটি খাচ্ছে আনন্দের উচ্ছ্বাসেহঠাৎ দৈতাকার বাদল ধূসর মেঘে ঢাকলো আকাশফিনফিনে রোদের উজ্বলতায় মোলায়েম পরিবেশবৃষ্টি নামার ভয়ে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা কাম্পের উদ্দেশ্যেএপাড়ে আস্তেই অল্প অবগুন্ঠন খুলে অবাধ অকৃপণ মায়াবী আলোয় ভরে উঠলো উপত্যকা

  বিকেলে গেলাম ডোমেল গেটেএধারেও অনেকগুলো ভান্ডারা আছেমাঝে মাঝে      যাত্রীদের জন্য শৌচালয়,পানীয় জলের  ব্যবস্থাক্রমশ চড়াই ভাঙছি স্বচ্ছন্দে চলার উল্লাস স্তিমিতডান দিকে পাহাড়ের গায়ে সবুজ বনানী,কোথাও লেগে আছে না গলা বরফের মোটা আস্তরন,কোথাও ঝর্ণার ধারা নেমে নীচে মিশেছে অমরগঙ্গায় বাঁ-হাতে ঘাস জমি,এরপর পাহাড়জমিতে ইতস্তত ঘোড়াপোষ্টের  আলোয় আলোকিত রাস্তাকাদা মাখা বিধস্ত গুহা ফেরৎ আসা যাত্রী দেখে কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর ভয়াবহ রাত কাটিয়েছি,বেঁচে আছি এই সৌভাগ্যবুক কাঁপানো সে শব্দসর্বগ্রাসী কাদা জল পাথরের স্রোতে ভেসে যায় সবআর্তনাদ ভেসে যাওয়া মানুষের ওহ! মহাকাল! কি কষ্ট! মর্মান্তিক,করুণ…’চোখে জল, বাকরুদ্ধআর কিছু জিজ্ঞাসা সায় দেয়নি মন

   আস্তানাতে ফিরে শুনি কাল শোনমার্গ যাবার প্রস্তাবসাত-আটজন রাজীসকালে পঙ্কজদা আর আমি বেরলাম গাড়ীর খোঁজেনরম কুয়াসা ঘেরা পরিবেশবাসস্ট্যান্ডে দু-একজন গাড়ী চালকের সঙ্গে বাতচিতে,কেউ রাজী না যেতেস্থানীয় একজন জানালেন কাল বকরি ঈদ,গাড়ী পাবোনা,নো এন্ট্রী থাকবে ফেরবার সময় বাজারের রাস্তায়ভাঙা হৃদয়ে ক্যাম্পে ফেরাসবাই কাওয়া খাচ্ছেবাবু আমাদের টিমের কনিষ্ঠ যাত্রী ছুট লাগালো কাওয়া বিক্রেতাকে ধরে আনতেপিতলের বড় ঘড়ার মুখে কেটলির নল লাগানো পাত্রনীচে কাঠকয়লার জ্বালকাগজের বড় গেলাসে পরিপূর্ণ উত্তপ্ত কাওয়াকে প্রথম আস্বাদন আমারকাশ্মীরি এই পানীয়ে নাকি শরীরের ব্যাথা কমে,উত্তাপ আসে দেহেখুব স্বাদু লাগেনিতবু গলা মেলালাম দারুণ বলে

  দেবাশিষ যাওয়া হবে না যখন চল নদীর ধারে অমরনাথের দুর্ঘটনা বিশেষ কোন ছাপ ছাপ ফেলেছে মনে হলনা যাত্রী হৃদয়েপরিবেশ স্বাভাবিক,সবাই জানতে ব্যাস্ত যাত্রা চালু হবে কবেআধাসেনারা বক্তব্য কাজ চলছে ওপর থেকে অনুমতি এলেই শুরু হবে যাত্রা



অমরগঙ্গার ওপারে চলে এলামআমাদের কালকের বসার জায়গার দখল আজ অন্য এক দলেরওনাদের থেকে অল্প দূরত্বে স্থান নিলাম আমরাকানে এল দেশের ভাষা,..আর্য শব্দ নিয়ে বির্তক আছেবিদেশী পণ্ডিত তাদের অনুসরণকারীরা বলেন- অর ধাতু থেকে আর্যঅর মানে কর্ষণমানে আর্যদের জীবিকা কৃষিকাজএদিকে ঋগ্ববেদে কৃষিকাজের কোন পরিচয় উল্লেখ নেইসায়নাচার্যের মত হল ধাতু ণাৎ প্রত্যয় করে আর্য ধাতু বলতে বোঝায় গমন,অর্থাৎ একস্থান থেক অন্য স্থানে গমন করত আর্যরাএটা সমর্থন যোগ্যঅন্যজন-এটা আমি মনে করি পশুপালন ছিল আর্য জাতীর প্রধান জীবিকা প্রমান,--প্রার্থনাকালে বলতেন--কল্যাণ হোক গরু,ভেড়া,ছাগল,ঘোড়া সঙ্গে নিজেদের স্বজনদের(ঋক১/৪৫/) হিন্দু আণ্ডা,মুসলিম আন্ডার ব্যাপারটা কি দাদা?বিচিত্র প্রশ্নে কান সজাগএটা তুমি পরিব্রাজক স্বামী অভেদানন্দবইয়ে পাবেসে যুগে জম্বু আসার সরাসরি ট্রেন না থাকার জন্য শ্রীনগরে আসতে হত রাওলাপিন্ডি থেকেওনারা আম্বাল ক্যান্ট থেকে উঠেছেন লাহোড়ের ট্রেনেপ্লাটর্ফমে হকারের হাঁক হিন্দু আণ্ডা,মুসলিম আন্ডাবলে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেনহিন্দু আন্ডা হল হাঁসের ডিম আর মুসলিম আন্ডা মুর্গীর

আকাশে ঘন ঘন হেলিকাপ্টারের আসা যাওয়া দেখে পঙ্কজদা বল এয়ার আম্বুলেন্সআহতদের নিয়ে আসছে হাসপাতালেকখন ধুসর মেঘ কখনো সাদা মেঘে কপ্টারগুলো লুকিয়ে গর্জন করে অস্তিত্ব জানায়চোখে পড়ল  গাছের আড়ালে  বসে থাকা এক বৃদ্ধা নিজের কাজে ব্যস্তছবিটা নেব বলে সে দিকে জোরে হাঁটতে গিয়ে খেলাম আছারবৃদ্ধা খিল খিল হাসির মুখে আঁচল চাপলোহাতের ক্যামেরা নজরে আসতে মুখ ঘোরালেননাছোড় আমি উনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কিছু না দেখে  সাটারে চাপরাগ উনার গজগজনি তে প্রকাশ পেতেই দ্রুত স্থান পরিত্যাগ করে
ঘোড়াওলাদের
প্লাস্টিক ছাউনির সামনেগাছতলায় পাথর সাজিয়ে অর্ধবৃত্তাকার উনুনে কাঠের জ্বালে চলছে তাদের রান্নাবান্নামশলার মাথা ধরানো ঝাঁঝালো গন্ধপ্রথম সম্ভাষণে জয় ভোলেবলে আপন করলশুধু এরা নন, মেলার সব কাশ্মীরিদের মুখে এই ধবনিযাত্রা থেকে বছরের অনেকটা খোরাকি ওঠে ওনাদেরবাকী সময় চাষ-আবাদ, পশুপালনজমি নেই যাদের,তারা ভেড়া নিয়ে চলে যায় পাহাড়ী উপত্যকায় অথবা অন্যের জমিতে জন খাটেসবার যে তাদের নিজেদের ঘোড়া তা নয়,মেলার সময় ভাড়া নেয় ঘোড়ার মালিকের থেকেমুখে গাড় রেখার হিজিবিজি আড়ালে কষ্টের চিহ্ন থাকলেও ওনাদের প্রাণের ওজন মুখের হাসিতেদেবাশিস হাত নেড়ে চিৎকারে নীচে নেমে আসি 
  কাম্পে ফিরে রোজকার মত আধ-বালতি গরম জল পঁচিশ টাকায় কিনে,ঈষৎ-উষ্ণ জলে স্নান ভাণ্ডারেতে খাওয়াবিকেলে বেরোবো বলে এগিয়েছি স্বপনদা জানালো যাত্রা নিয়ে মিটিং আছেযাত্রা এখনো অনিশ্চিতঅমরনাথ দর্শন করে শ্রীনগর আর বৈষ্ণোদেবী ধাম যাওয়ার কথাঅপেক্ষায় সময় কাটালে এ কূল ও কুল দুটোয় যাবেমিটিং এর সিদ্ধান্ত পরশুর মধ্যে যদি রাস্তা না খোলে দর্শন না করে বালতাল ছাড়বো

   পরদিন সকালে বেস হাসপাতালের সামনে পুরানো হেলিপ্যাডের মাঠে বকরী ইদের নমাজপ্রায় চার-পাঁচশো ধর্মপ্রাণ মানুষের সমবেত প্রার্থনাঅনেকে আবার নমাজে না গিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্তমাঠে খানিক সময় কাটিয়ে,ক্যাম্পের উদ্দ্যেশে যাত্রাআধাসেনাকে ঘিরে  যাত্রীদের প্রশ্ন –‘কবে রাস্তা খুলবেএক সেনা তার মোবাইল  যাত্রীদের ভয়াবহ রাতের ভিডিও গুলো দেখিয়ে প্রশ্ন এই মৃত  শরীরগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে কোন মানসিকতা নিয়ে তীর্থ দর্শন করবেন?এরমধ্যে একটা ছবি দেখে সকলে আঁতকে উঠেছিলামএক সেনা বেলচা দিয়ে দেহ সরাতে গেলে শরীর আর মুণ্ডু আলাদা হয়ে গেলবোবা আর্তনাদে থরথরিয়ে চলে আসি সোজা ক্যাম্পেঅফুরন্ত উৎসাহের পায়ের তলার মাটি সরে ঘোষণা করেছে ঠাঁই নাইবেওয়ারিশ লাট লাগানো লাশ একদিকে,অন্যদিকে আমাদের মত অসংখ্য উৎসুক যাত্রীমনের মধ্যে হাজার প্রশ্নের ঠেলাঠেলিজবাব খুঁজতে ফাঁপরে পড়ে,বুকের ভিতর আঁকুপাঁকু যন্ত্রনা লাশগুলোকে কেউ চিনছে না,চিনবে কিনা তাও জানা নেইঅথচ প্রত্যেকের মান-অপমান,রাগ-অনুরাগ-অভিমানের সূক্ষ্ম সুতার বাঁধনে বোনা ছিল সংসারঐ সন্তান হারনো মায়ের পাথরে মাথা ঠোঁকা অসহায় আর্তনাদ!ভয়ঙ্কর!নিরাশ্রয়,নিঃসঙ্গ,নিরবলম্ব শরীর,       যেখানে এখন প্রাণ ধুক ধুক করে বেঁচে আছেরুদ্র ভৈরবের উন্মুক্ত দ্বারে যেন দিন শেষের ঘোষণাবাড়ীর জন্য মোচড় দেয় মনটায়পঙ্কজদা আমাকে ঝাঁকিয়ে দিয়েধ্যান করছেন নাকি!  সচকিত হয়ে হেসে–‘স্নান হয়ে গেল আপনাদের?                   

বিকেলে অভ্যাস মত বেড়ানোপ্রতিটা ঘোষণাতে আমাদের কানখাড়াকোন ঘোষণা পেলাম না যাত্রার ব্যাপারেউন্মত্ত তোলপাড়-কি হবে,আমাদের? কপালে কি দর্শন নেই!ভাবনাটা এমন জেঁকে বসেছে যে মানসিক উদ্বেগে মন অশান্তঝকেঝকে আকাশে ঘন ঘন কপ্টারের যাওয়া আসাঅস্বস্তি কাটাতে ক্যমেরার লেন্সে চোখ রেখে পটাপট সাটার টেপাআমার ভ্রমণের দলিল রচনা করে রাখাকোন এক অবসরে সেগুলোতে চোখ রেখে জাবর কাটবোতাতে কি বোঝা যাবে মনের হা- হুতাশ       

সন্ধ্যা গেলো, রাত এলোময়দান আলোকিতএলোমেলো অস্বস্তিতে অবসাদের   অন্ধকার সঙ্গে বিচ্ছিরি আলুথালু বৃষ্টিবসা হল আবারতিনজন বাদে সবাই একমত কাল চলে যাবার ব্যাপারেকাশ্মীরাদি টিংকুদি বাবু সজোর ঘোষণা,কোনভাবেই তারা দর্শন না করে বালতাল ছাড়বে নাস্বপনদা সবাইকে থামিয়ে মাইকের ঘোষণা শোনবার চেষ্টায়ঠিকমত শোনা না যাওয়াতে বাইরে এসে খবর নিয়ে জানালেন  কাল পহেলগাঁও এর পথে  যাত্রা হবেমৃতসজ্ঞীবনীসিদ্ধান্ত বদলথাকছি কাল বালতালে

  আজ সকালের বালতাল অন্য চেহারা চারদিনে সংখ্যায় বেড়েছে মানুষযাত্রী চাপে  অগোছালো চেনা ছন্দভিড় প্রতিটা ভাণ্ডারেতে,দোকানেচা নিতেও দিতে হবে লাইনঅগত্যা,ঘুমভাঙানিয়া চা বলে কথামগজের তর্কাসুররা যা পারে বলুক প্রাচীন তীর্থের টানে এত মানুষের ভিড়ে হৃদয়ে প্রসন্নতার অনুভূতিচা পর্ব মিটিয়ে গন্তব্য আমাদের নদীর ওপারেএত মানুষের আনন্দ উল্লাসে একা চলা নদীর তরঙ্গে বিস্ময়ের উচ্ছাস অমরেশ্বর অমরনাথের নিজস্ব বিলাসভূমিএখানের আকাশ-বাতাস,জল-জঙ্গলে মিশে আছে তাঁর অস্বিত্বজনগণের দেবতা তিনিপ্রকৃতিগত ভাবে আত্মভোলা সহজ সরলভক্ত খুশি থাকুক এই তাঁর লক্ষ্যঅন্যের কোন দুরভিসন্ধি থাকতে পারে সে কথা ভাবতে অপারকতাই ভস্মাসুরকে নির্দিদ্ধায় শর্ত ছাড়া বর দেন,যার মাথায়  হাত রাখবে সেই ভস্ম হয়ে যাবেবরের সত্যতা যাচাই করতে শিবের মাথাতেই হাত রাখতে যায় ভস্মাসুরশেষমেষ রক্ষা পান উনি বিষ্ণুর কারিকুরিতেভগীরথ গঙ্গা আনবেন মর্তে,কিন্তু কে ধারন করবেন সেই বেগমহাদেব নিজের জটাজালে ধারন করলেন গঙ্গাকেসমুদ্রমন্থনে অমৃত পান করলেন অন্য দেবতারা,গরল পান করে হলেন নীলকণ্ঠবারবার  নিজেকে বিপন্ন করে কল্যান সাধন করেছেন দেবতা-মানুষ-প্রকৃতিরঅতি সাধারণ বেশভূষাচুলে তেল নেই,না আঁচড়ানো রুক্ষ চুল জটার বাঁধনেখুব অল্পে খুশি বলে তিনি আশুতোষ, পশুদের রক্ষাকর্তা বলে তিনি পশুপতি,সর্বশ্রেষ্ঠ বৈদ্য বলে তিনি বৈদ্যনাথ,গীতবাদ্য-নৃত্যকলার উদ্ভাবক তাই তিনি নটরাজআবার বাংলার গাজনে কোন ভেদাভেদ না রেখে ব্রাহ্মণ থেকে চণ্ডাল সবাই গলায় উপবীত পড়িয়ে মর্যাদা দিলেন ভক্তেরযে ভাবে সমাজের সব শ্রেনীতে বিভিন্ন নামে ওনার বিরাজতাঁকে আমআদমীর দেবতা ছাড়া অন্য কিছু কি বলা যায়? সেই আমআদমী দর্শনেচ্ছু ভক্ত তাঁর অপেক্ষায়দর্শন তিনি অব্যশই দেবেনহৃদয়ে জাগে বিশ্বাসের বাণী  

  নদীর ধারে ভীষণ ভিড়আসন পাতলাম আমরা গাছের ছাওয়াতেঘন সবুজ পাতার ফাঁকফোকর থেকে আসা ভাঙা ভাঙা আলো এঁকেছে সবুজ ঘাসে নকশী কাঁথাযতদূর চোখ যায় সবুজের বিচিত্র সমাবেশখানিক তফাতে জিরোচ্ছে তিন চার জন সহিস তাদের ঘোড়া গুলো পরম তৃপ্তিতে ঘাস চিবিয়ে,আনন্দ জানান দেয় হ্রেষাধবনিতেদুটি ছোট স্থানীয় বাচ্ছা আপন খেয়ালে তাদের দিদিমা বা ঠাকুমার সাথে মাঝে মাঝে মেতে ওঠে দুষ্টমি আর ছুটোছুটিতেবেদম বৃদ্ধা হাল ছেড়ে কখন রাগে,কখন হাসি ছড়িয়ে কিছু বলেনবীন-প্রবীনের খেলাশহুরে ধুলোভরা চোখে পরিবেশ গুনে স্মৃতির দর্পনে ভাসা শৈশবের হারনো ছবি

  অপ্রত্যাশিত নারীকন্ঠে এসকিউজ মি,আপনি ফটোগ্রাফার? কিছু বলার আগেই বাকপটীয়সী নারী নিজের পরিচয় জানিয়ে আমার হাতে মোবাইল দিয়ে প্লিজ ছবি তুলে দিননাদলের অন্য সদস্যরা মিটি মিটি হাসিতে সমবেত গান ধরলো- ঘরেও নহে পারেও নহে/ যেজন আছে মাঝখানে সন্ধ্যাবেলায় কে ডেকে নেয় তারেপঙ্কজদা উঁহু,সন্ধ্যাবেলায় নয় সকাল বেলায়লজ্জায় মরি মরিভাগ্যিস আধুনিকা বাংলা বোঝেনাছবি তুলতে যাবার ঠিক আগের মুহূর্তে, না ছবি তুলবেন না,রাগত গলায় এক যুবক ফোনটা হাত থেকে নিল কেড়ে আবার জ্বালেতে এলে? এবার কি নতুন ফিকির? চলে যাও,বিরক্ত করলে পুলিশ ডাকবোনারীর চাপা তপ্ত কণ্ঠ, হতবম্ভ।যুগলের আরো কিছু সংলাপ শোনার ইচ্ছাকে সামলে পিটটান দিলাম    

    বেলা এগোচ্ছেরোদের তেজ গা পোড়াইতোয়াক্কা নেই যাত্রীদেররাস্তায়,নদীর ধারে সর্বত্র তাদের গতির দোলাহঠাৎ শ্যামলা যুবক এসে ভাঙা বাংলায় জিজ্ঞাসা বাঙালী কিনা? এরপর বড়বাজারে বছর-দুয়েকের কাজের অভিজ্ঞতা।কলকাতার মানুষের উচ্ছসিত প্রশংসা।সব বুঝলাম,খুলে কাশুন দেখি? পঙ্কজদার সোজাসাপ্টা প্রশ্ন।দাদা চাষীদের কাছ থেকে আমি কেশর কিনে,টুরিষ্টদের কাছে বিক্রি করি খুব কম দামে অরিজিনাল শিলাজিত পাবেন ব্যাগ খুলে কেশরের ছোট ডিবে খুলে আসল কেশর কি ভাবে চিনব ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ। দেবাশিসের জিঞ্জাসাদাম কত? বাজারে দশ গ্রামের দাম প্রায় দু-হাজার টাকা,আমার কাছে পাবেন পাঁচশো টাকায়পঙ্কজদার দাম পঞ্চাশ টাকানাছোর যুবক দুশো টাকা,একশো টাকা,পঁচাত্তর টাকা শেষ দাম জানিয়ে বিদায় নেই।আমরাও উঠে ক্যাম্প মুখো।

   ক্যাম্পে ফিরে দেখি মিটিং চলছে টেন্টেসবার মুখে হাসি দাদা আজ যদি এখান চলে যেতেন,কেমন ফাঁকি পড়তেন ভাবুন?বাবুর প্রশ্ন স্বপন দা জানালো-‘কালকে বালতালের রাস্তা খুলবেসকাল তিনটেয় বেরতে হবে কারন তিন দিনের জমা যাত্রী  যাবেডোমেল চেকিং পয়েন্টে যত আগে দাঁড়াতে পারবো ততো আগে গুহার কাছে পৌঁছবনতুন নিয়মে গুহা বন্ধ হয়ে যাবে বিকেল সাড়ে-চারটেতেদেখে বালতাল ফেরৎ,পহেলগাঁও দিয়ে নামতে দেবে না আর ওপরে থাকতেও দেবে নাহাতে প্রত্যেকে আধার,পরচি রাখবেন গলায় ঝুলবে সেরিন বোর্ডের দেওয়া ব্যাচমনে রাখবেন ঘোড়া বা ডুলি ভাড়া নিলে তাদের কার্ড অব্যশই নিয়ে নেবেনসময়ের মধ্যে গুহাতে পৌঁছাতে যারা হেঁটে উঠবেন ভাবছেন প্রত্যেকের ঘোড়াতে যাওয়া ভাল ফেরবার সময় মনে হলে হেঁটে আসবেনপরামর্শ স্বপনদারবেস হাসপাতালে ঘোষবাবু ভর্তি আছেনখবরটা নিয়ে আসিউঠে পড়লেন স্বপনদা পিছু নিলাম আমারওস্যালাইন অক্সিজেনের বাঁধনে ঘোষবাবু ডাক্তার জানলেন উনার অবস্থা স্থিতিশীলজটিলতা কিছু না হলে ডিসচার্জ বিকালে                 

  রাতের ঘুম উধাওকখন তিনটে বাজবেঘুম ভেঙে ঘড়ি দেখা আবার শুয়ে পরা  রাত দুটোয় ঘুম ছুটলে দেখি সকলের বেরোবার প্রস্তুতিহর হর মহাদেবরব রাস্তায় অথাৎ ঘুমছুট যাত্রী ডোমেল মুখিপৌনে তিনটে বেড়োন সবার গলায় বাজে জয় বাবা  অমরনাথজনস্রোত,লক্ষ্য একউচ্ছ্বাস,ছোটাছুটি,জয়ধ্বনিআধো অন্ধকারে এগিয়ে চলাডোমেল গেটের বাইরে থেকে অনেকে ভাড়া নিচ্ছে ঘোড়াআমাদেরও আঠাশশোতে দর দামে চূড়ান্ত চারটে ঘোড়াবাদ সাধলো স্বপনদার আশ্বাসগেট পেরলে আরো সস্তা পাবো ঘোড়াফল বিপত্তিগেট পেরিয়ে দেখি যাত্রী তুলনায় ঘোড়া অপ্রতুলভাড়া চড়া আটত্রিশশো কমে কিছু নেইবহু কষ্টে সাড়ে-তিনে রাজী করিয়ে,যখন রওনা দিলাম তখন সকাল ছটা

  ঘোড়ার পিঠে পাহাড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকার দরুন তীব্র আড়ষ্টতা,অস্বস্তি, ভয়বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপজল-মাটি-ঘোড়ার বিষ্ঠায় মিশ্র টল-টলে পাঁকের রাস্তা সঙ্গে ভয়ঙ্কর চড়াই বেয়ে পাক খেতে খেতে ক্রমশ উর্ধবগমনহেঁটে আসলে পথ পেরোতে বেদম হতাম ব্যাপারে নিশ্চিতআকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ চুঁইয়ে নরম আলোয় ঝলমলে চারদিকপিছনের শুভ্র গিরি শিখরে চকচকে উজ্জ্বলতাসুর্য মাঝে মাঝে ধূসর মায়াবী মেঘে বন্দীপিছনে সামনে অগণিত নাগরিকের মাথাঅসাবধানে অঘটন ও ঘটছেসহিসদের কথা মত চড়াই ওঠার সময় সামনে ঝুঁকে উতরায়ে পিছনে হেলে বসার নিয়ম,বেনিয়মে ঘোড়া থেকে পতনআহত হয়েও আবার চলাবেয়ারা ঘোড়া!সে চলেছে,ডানদিকে সর্বনাশী গভীর খাদের পাশ দিয়েচোখের মুগ্ধতা গৌন, অজানা ভয়ে শঙ্কার ডঙ্কা ডাকে মনেখাদের নীচে চকচকে খোলস ছাড়া সাপের মত তেড়েফুড়ে বয়ে যায় অমরগঙ্গানদীর বুক মাঝে মাঝে দেখা মেলে    

গ্লেসিয়ার রূপী বরফেরস্রোতস্বিনী জমাট বরফে গহ্বর সৃষ্টি করে প্রবাহ রেখেছে বহালনদীর ওপারে  পাহাড়কে বেষ্টন করে ঘন নিবিড় বনপাহাড়ের চুড়া বেশিরভাগ নেড়াকোনটায় আবার হাল্কা বরফের চিহ্নবাঁহাতে সবুজ ঘাসে মোড়া পাহাড় ক্রমশ ডানদিকের পাহাড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আকাশ ছোঁবার চেষ্টায়পালকের মত হাল্কা সাদা কুয়াশা চোখ-মুখে শীতল প্রশান্তির ছোঁয়া দিয়ে মেঘ হয়ে জমাট বাঁধে আকাশের গায়েদু-এক জন ভীষণ সাহসী যাত্রী হাঁটছেন ঘোড়ার ভিড় ঠেলে গুটি-গুটি পায়ে ঘোড়া থামলে বাড়ছে তাদের হাঁটার গতিআকাশপথে অনবরত হেলিকপ্টারে পূর্ণাথীদের যাতায়াতবয়স্ক মানুষ অথবা ঘোড়াতে চাপতে যারা অসাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা চলেছেন কান্ডী বা পাল্কীতে

 পাঁচ কিমি পথ অতিক্রান্তচওড়া বাঁকের মুখে চায়ের দোকানের সামনে ঘোড়া থেকে  নেমে প্রাতরাশরোদের তাপ ভীষণ তীক্ষ্ণ পাশাপাশি দুটি দোকানে উপচে পরা ভিড়প্রায় মিনিট ত্রিশ বাদে চা আর টোষ্টে পেটপুজো সেরে ঘোড়ার পিঠে সওয়ারপথের ভান্ডারাতে দাঁড়ানোর উপায় নেইচলতি যাত্রীদের ছোট কাগজের প্লেটে তারা পরিবেশন করছেন কলা আর সিদ্ধ ছোলাএখন সেভাবে চড়াই নেই,বেশ সমতল বলা যেতে পারেডানদিকের ঢালে,সবুজ দূর্বার শোভা বাড়াতে ফুটেছে অসংখ্য ছোট ছোট হলুদ ফুল যেন টুইঙ্কিল টুইঙ্কিল লিটিল ষ্টারজায়গার নাম বারারি

  উতরায়ে নামছিসংগমের কিছুটা আগে ঘোড়া থেকে নামতে হল সবাই কেএখান থেকে দুটি রাস্তা ভাগ হয়েছেহেঁটে যাবেন যারা সোজা রাস্তা গিয়েছে গুহার দিকেএ পথের নাম কালীমাতাঅন্য রাস্তা আমাদেরসেটা প্রথমে নেমেছে তারপর আবার চড়াই ভেঙে সংগম টপে অপেক্ষা,যতক্ষণ না ঘোড়া আসেএই নামা ওঠার রাস্তাটা ঘোড়া চলবে না

  লাঠি ছাড়া নামাটা বেশ কষ্ট সাধ্যপ্রতি পদক্ষেপে সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে   গুঁড়ো পাথরে পা পিছলের ভয়েদূরে নদীর সংগমে অনেক মানুষের সমাগমসেদিকে না গিয়ে পা বাড়ালাম টপের রাস্তায়উঁচু পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণার জলের তীব্রতা থেকে যাত্রীদের সুরক্ষিত রাখতে দুটি লোহার সেতু,ওপরের হেঁটে যাওয়া যাত্রীদের  আর নীচে ঘোড়ার যাত্রীদের জন্যলোহার সেতুতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সৃষ্টি এবং মানুষের পথ দুয়ের সমন্ময় ভাবনা তারিফ যোগ্যপাশ দিয়ে বয়ে চলে অমরগঙ্গা নদীর বরফ ঠান্ডা জল বোতলে ভরে,চড়াই টপকে টপেএখন অপেক্ষা ঘোড়ার জন্য।  

 চারপাশে পাহাড় ঘেরা,একখন্ড ঘাসে মোড়া ঢালু জমিগভীর খাদের নীচ দিয়ে স্রোতস্বিনী অমরগঙ্গাসামনে এক পাহাড়ের মাথায় সেনা ছাঊনিবিভিন্ন প্রদেশের  মানুষের,বেষভূষার- ভাষার বিভিন্নতা ধুয়ে মুছে এখন শুধুই যাত্রীনানা রঙের পোশাক,ঠাট-বাঁটে নাগরিকতার ঝলক-ঝিলিকসুরেলা শিষের সুর কানে বাজলে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি,পাকা ডালিমের মত গায়ের রঙ,গায়ে সাদা জ্যাকেট,মাথা ভরা সদ্য পরা তুষারের মত সাদা ধবধবে চুল এক ভদ্রলোক আপনখেয়ালে অজানা সুর বাজছে  শিষেমুগ্ধ বিষ্ময়ে চেয়ে ছিলাম সেদিকেশিষের তরঙ্গে কোথাও যেন প্রেমের ঐশ্বরিক সত্তার অহং ত্বয়ি স্নিহ্যামিস্বীকৃতিঘোড়া যাদের আসছে বাবা অমরনাথের জয়ধ্বনি দিতে দিতে চলছে গুহা মন্দিরের পথেপঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের যুবক ওনাকে কিছু বলতে  উনি ক্র্যাচ নিয়ে উঠে ডুলির দিকে গেলেন এগিয়েহাসি-মস্করা,উদ্বিগ্ন মানুষের পায়চারী,টিফিন কৌটো খুলে

ভোজনের ও আয়োজনমাথার ওপর কখনো চিকচিকে রোদ,পরক্ষনেই বরফের ঠাণ্ডা হাওয়ার কাটাকুটি খেলাঅপেক্ষার অবসানঘোড়া এলোআবার যাত্রা শুরুপর্বতমালার সংকীর্ণ পথরেখা ধরে এগিয়ে চলাপহেলগাঁও এর পথের যাত্রীরা যখন চলতে থাকে আমাদের চলা তখন থামেশহরের রাস্তাতে যে ভাবে ট্রাফিক কন্ট্রোল হয়,সেই ভাবে কন্ট্রোল হচ্ছে ঘোড়ানানা স্রোতে ভাসা জীবনে নতুন অভিজ্ঞতাউঁচুতে উঠছিঘোড়া পা ফেলছে মানুষের মত সন্তপর্নেসামনের দুই পা ওপরে,পিছনের পা নীচেপাথুরে রাস্তায় পা স্লিপ করলে কোনরকমে সামাল দেয়সহিসের অদ্ভুত চিৎকার-হোউস-সাব্বাস,হোউস-সাব্বাসপুনরায় ঘোড়া সচলউৎরায়ে যখন অসমান উচ্চতার পাথুরে সিঁড়িতে নামছে ঘোড়া তখন প্রতি অঙ্গ কাঁদে মোর প্রতি অঙ্গ লাগিচোখ বন্ধ করে ইষ্টনাম জপঘোড়া থামলধরণীতে পা ফেলে লম্বা শ্বাসে শরীরের স্বস্তিসংগ্রামদা নাক কান মুলে খুব শিক্ষে দিলে বাবা ঘটকপৃষ্ঠে আর নয়   

  অমরগঙ্গা জল শক্ত বরফপেরোতে হবেহাঁটতে হাঁটতে বেসুরো গলায় পাগলা মনটারে তুই বাঁধধধধ…’মনে বাঁধন পড়লো কিনা বোঝার আগেই আমি পা হল বাঁধন ছাড়াপঙ্কজদা আতঙ্কিত স্বরে কেন রে তুই যেথা সেথা পরিস প্রাণে ফাঁদ যন্ত্রনা ক্লিষ্ট গলায় ওরে নীলাকাশে অমন করে হেসেই থাকে চাঁদ।সেনা জওয়ান ছুটে এসে আমার হাত ধরে তুলে পার করে দিল বরফের নদী রূপী ঈশ্বরের আস্তো উঠোনটাতান্ডবের কলঙ্কে সে উঠোনে কাদা কাদা মাখা স্তুপীকৃত ছেঁড়া পরিধেয় কাপড়,প্লাস্টিক,চপ্পল,ব্যাগ,কম্বল আরো অনেক কিছুওপরে নতুন করে আবার  প্লাস্টিকের কিছু অস্থায়ী দোকান তৈরী যাত্রী সেবায়মন বলল বাপু তাড়া কিসের একটু স্মরণ করো দুর্যোগে প্রাণ হারানো সহযাত্রীর কথাস্মরণ করো যুগ যুগ ধরে চলে আসা যাত্রায় অংশ নেওয়া যাত্রীদের কথা যাঁরা ফিরে যেতে পারেনি প্রিয়জনের কাছেসকলের আত্মার উদ্দেশ্যে প্রণাম শান্তি কামনা করে হাঁটা          

 সাড়ে তিনটে বাজে সারে-চারটেয় গুহামন্দির দর্শনার্থীদের জন্য হবে বন্ধজোর বাড়লো হাঁটায়গন্তব্য গুলজারের দোকানবরফের চাঙড়ের ওপর দ্রুত হাঁটার ফল আবার ধপাসএবার হাঁটুতে চোটব্যাথা ব্যকুল করল আমায়সংগ্রামদা তিরস্কার করতে করতে সোজা করলো টেনে সহৃদয় যাত্রী ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তার লাঠি বাড়িয়ে দেয় আমার হাতেএগিয়ে চলুনসামান্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটাতা হোক,অন্দর উৎসাহে উজ্জ্বলঅচেনা মানুষের মহত্বের মুগ্ধতায় মন ভিজেগুলজারের দোকানে মোবাইল, ব্যাগ,ক্যামেরা    রেখে,পূজার সামগ্রী হাতে,আবার হাঁটা টেন্টের সামনের সংকীর্ণ রাস্তায় এঁকে বেঁকে গুহামুখেবাক্যহারা,চোখের দৃষ্টি ঝাপসা আর্শীবাদী হিম বাতাসে তৃষিত হৃদয় পূর্ণগুহার ভিতরে কবুতরের ডানা ঝাপটানো গুহার মাথার ওপরে আরো হাজার তিন ফুট উঁচু গিরিশিখরডানদিকে রুক্ষ পাহাড়ের মাঝে মাঝে বরফের সাজ১২৭৫৬ ফুট উচ্চতায় ১২০ ফুট দৈর্ঘ,৭৫ফুট উঁচু পবিত্র গুহায় স্বয়ম্ভুর বাসস্থান,যা সিন্ধ-ভ্যালির,অমরনাথ পর্বতে অবস্থিতগুহার পাশের ঝর্ণা নিশ্চিহ্ন ফ্ল্যাশ ফ্লাডে

  বহুদিনের ভাগ্যের কালো আকাশ ফর্সা হয়ে বর্ফানি বাবার দুয়ারেব্যাবধান মাত্র দুশো সিঁড়িসমবেত জয়বাবা অমরনাথ ধ্বনির সঙ্গে গলা মিলিয়ে সিঁড়ি ভাঙাকিছুটা যেতেই বসার জায়গায় বসে জুতো খুলে লাইনে সামিলযাদের মোবাইল বা ক্যামেরা আছে জমা করতে হচ্ছে নির্দিষ্ট কাউন্টারেও সব ঝামেলা আগেই চুকিয়ে আসাতে আমরা,এগিয়ে চলিচেকিং, এরপর ভিড়ের গুঁতোগুঁতিদড়ি ফেলে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মন্দিরে ভিড়একদল বেরোলে,আরেক দলের প্রবেশাধিকার

 সমবেত মন্ত্র উচ্চারনে গুহা মন্দির পবিত্র আনন্দসামনে লোহার রেলিংএরপর পূজারীদের স্থানশেষে কাঁচের দেওয়ালের পর বরফের বেদীবেদীর ওপর আড়াই-তিন ফুটের তুষারলিঙ্গআরো দুটি ভীষণ ছোট লিঙ্গমাতা পার্বতী এবং সিদ্ধিদাতা গণেশেরঅমরনাথ শুধু শিবক্ষেত্র নয় শক্তিপীঠওসতীর গলা পড়েছিল এখানেগুহার ছাদ থেকে অনবরত চুঁইয়ে জল পড়ছে টপ টপ করেশুনলাম প্রায় বারো ফুট মত তুষারলিঙ্গ এই কয়েকদিনে গলে হয়েছেআড়াই-তিন ফুটজাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত গুহামন্দিরআম আদমির দেবতা তিনিফ্যাসাদ বাধালো নিজের মনভক্তের মনে বিপরীত টানবিজ্ঞান বলে একে      ‘Stalagmite’অন্দরে বিজ্ঞান আর ঈশ্বরের টানাটানিসংশয়অর্বাচীন হলে যা    বেসামাল মন ত্রিশঙ্কুদর্শনও পূজা সেরে গুহার বাইরেহাতে প্রসাদী ফুল প্রসাদ। 

  উত্তেজনার অবসানফুরফুরে মনে উদয় হল ব্রেকফাস্ট পরে পেটে পড়েনি কিছু  খাইনি! মনে আস্তেই,পেট চোঁচোভান্ডারা বা কোন খাবার দোকান নেই,সব ভেসে গিয়েছে দুর্যোগেএক সাধুবাবার খোঁজ পেলাম,যেখানে খাবার মিলতে পারেসিঁড়ি দিয়ে নেমে বাঁদিকের বাঁকে আস্তানাওনাকে ভাতের কথা বলতে উনি জানালেন সব্জী শেষ,ভাত আর রাজমা ডাল পাবোকথায় বলে খিদেতে বাঘেও ঘাস খায় অতএব রাজমা ডাল-ভাতই অমৃতপেটের আগুন একটু ঠাণ্ডা হতে নজর সাধুর দিকেচোখ জোড়া ঢুলু ঢুলু,মাথায় জটা,শুনেছি এসব জটার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছেমুখের বেশীর ভাগ অংশ দাড়িতে ঢাকাগাঁজার কল্কে ফাটানো টানের পর গলগল ধোঁয়া নির্গমন দুই নাসারন্ধ আর মুখে দিয়েবাজখাঁই ব্যোম ভোলে ডাকে নাদুস চেহারাতে  লাগে কাঁপনআপন খেয়ালে রাগত গলায় মূর্খের দল প্রকৃতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলপ্রকৃতিকে বন্দী করার স্পর্ধা যত দেখাবি তত ধ্বংস হবিমতলববাজ বুদ্ধিতে যত শান দিবি,ততো বিপদতার মেজাজ-মর্জি বুঝে চল তবে নতুন পথ দেখাবে। প্রকৃতিকে জয়!অসম্ভবহাহাহাহাহাগূঢ় এ ভাষায় সাড়া দেবার ইচ্ছে থাকলেও সময়ের অভাবফেরার বাঁশি বেজেছে মনেফিরবো হেঁটেঅন্নদাতা সাধুবাবাকে প্রণাম জানিয়ে দানপাত্রে প্রণামী রেখে ফেরত গুলজারের ক্যাম্পে গুলজারের কথামত নদীর এপারে কালীমাতা মন্দিরের পথে হাঁটাঘড়িতে সময়  পাঁচটাআকাশে গোমরামুখো মেঘআসার সময় অমরগঙ্গার একতলার সেতু টপকে  পৌঁছেছিলাম সংগম চটিযেহেতু নদীর অন্যপারে আছি এবার অমরগঙ্গা নেইআছে সেই বিশাল ঝর্ণার দোতলা সেতুঝর্ণার জলের ছাটে ভিজে ভিজে হয় উইন্ড চিটার মেঘ কেটে যাদুকরী সোনালী গোধুলির আলো লেগে আকাশ নদী পাহাড়েনা দাঁড়িয়ে উপায় নেইসবার দৃষ্টি দূরের বরফ মোড়া অলৌকিক সোনার পাহাড়ে রঙ বদলে ফিকে লাল  গাড় লাল হয়ে চলে যায় মেঘের গ্রাসেসন্ধ্যা হয় জ্বলে ওঠে সোলার আলোবাতিআলোবাতির নীচে চায়ের দোকানে সাময়িক বিরতি

  সামনে পূর্ণিমা,অলৌকিক চাঁদের নরম আলোয় আকাশ-বাতাস,অরণ্য-পর্বত, নদী-নির্ঝর,  মায়াময়আকাশের নক্ষত্র গুলো নীচে নেমে এসেছেপথ এবার একটানা উৎরাইগতিকে নিয়ন্ত্রণ পায়ের ওপর চাপ কমানোর জন্য লাঠি এই সময় ভীষণ প্রয়োজন। রাস্তায় মোটামুটি আলোর ব্যবস্থা থাকলেও আলোর ঔজ্বলতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুলরাত সাড়ে-দশটা নাগাদ আমরা পৌঁছলাম ডোমেলডোমেলে বাবু আর টিংকু কাশ্মীরাদির জন্য বসে আছেএকসঙ্গে ক্যম্পে ফিরবেআমরাও বসলামবাবু জানালো মনোজ বাবুকে পাওয়া যাচ্ছে না,ফোন বন্ধদিদি, টিমের সবচেয়ে সিনিয়ার সদস্য,ঘোড়া না পেয়ে জওয়ান দের সাহায্য নিয়ে আজ রাত কাটাবেন গুহা চত্বরেকাল উনাকে জওয়ানরা গুহা থেকে ঘোড়াতে উঠিয়ে দেবেমনোজ বাবুকে নিয়ে সকলে চিন্তিতসংগ্রামদা জানালো চিন্তার কি আছে? উনাকে রাস্তাতে তো আমরা দেখিনি,সিনিয়ার মানুষ দিদির মত উনি কোন ব্যবস্থা করে নেবেনবাবু জানায় চিন্তাটা ফোনটা বন্ধ বলেফোনে চার্জ নেই তাই হয়তোউনি ঠিক আছেনউনার বয়স হলেও উনি চটপটে মানুষ ঠিক চলে আসবেন কালপঙ্কজদার উত্তর

  নিজেদের আস্তানার দিকে পা বাড়তে কাকাবাবু..কথা ছিল..পিছুডাকে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি অবাঙালি সেই বাকপটিয়সী শ্যামবর্ণা নারী সঙ্গে তার পুরুষ সঙ্গীমনের বিরক্তি চেপে হাসিমুখে-বলুনলজ্জাবনত নেত্রেসেদিনের ব্যবহারে লজ্জিত আমরাঠিক আছে,ওটা এমন কি ব্যাপার

 পরদিন আমরা দুপুর আড়াইটে নাগাদ রওনা দিলাম শ্রীনগরের উদ্দ্যশ্যেশোনমার্গে চা বিরতিচা পর্ব মিটিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছিজে কে পুলিশের ভ্যান থেকে অফিসার মুখ বাড়িয়ে আমাদের গন্তব্য শ্রীনগর শুনে নিদান দিলেন এক্ষুনি যেন আমরা বেরিয়ে যায়পাঁচটায় মনিগ্রামে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবেপরি কি মরি করে আবার যাত্রা শুরুবিধি বাম      আধাসেনারা রাস্তায় কাঁটাতারের রোল ফেলে আবরূদ্ধ করেছে রাস্তাঘড়িতে সময় পাঁচটা    তিন। চিৎকার-চেঁচামিচি,যুক্তি-পাল্টা যুক্তি,অনুনয়-বিনয় সব বিফলঅতঃপর রাত্রি যাপন এখানেইপঙ্কজদা ছুটে এসে খবর দিল চলুন গরম পেল্লায় সাইজের জিলিপি ভাজা চলছে,লাইন লাগায় ভান্ডারাতেবাবা যখন আটকেছে,মনে হচ্ছে তার কৃপায় আজ রাতে ভালো খাবার জুটবে এখানে      

  খুব সকালে বাস ছাড়বেরাতের খাবার পর্ব মিটিয়ে ঘুমখুব সকালে উঠে দেখি হাল্কা স্থির কুয়াসার আবছা চাদরমিলিটারি ক্যাম্প এটাজওয়ানরা মাঠে অভ্যাস করছে তাদের প্যারেডএক লক্ষ্যে কটা দিন চেনা অচেনা মানুষ,হিমালয়ের জল জঙ্গল নদী আধ্যাত্মিক বাতাসে আনন্দের নিবিড়তায় পরিপূর্ণ হৃদয়তবু একটা অবুঝ ব্যাকুলতা ঘুরে ঘুরে আসেবারবার মনে হয় কি যেন দেখা হলনাসেটা হয়ত ছিল অভিজ্ঞতার অভাবে নজরে আসেনিএ এক অদ্ভুত মধুর বেদনাকিছুক্ষণ পড় সব চাপা পরে যাবে জীবিকার টানেআচ্ছা, জীবন মানেতো শুধু জীবিকা নয়

 একঝাঁক ছোট ছোট নাম না জানা পাখির কিচিরমিচিরে চোখতুলে ক্ষণিকের চোখাচুখি পরক্ষণেই উধাওওদের ভাষা না বুঝলেও মনে হল আবার এসো,দেখা হবে অন্য কোন হিমালয়ের প্রান্তরে      

       অস্ত্যত্তরস্যাং দিশি দেবতাত্মা হিমালয়ো নাম নগাধিরাজঃ

       পূর্বাপরৌ তোয়নিধীবগাহ্যস্থতঃ পূথিব্যা ইব মানদণ্ডঃ।।