 |
মেঘাতাবুরু বনবাংলো |
ম্যানেজার সাহেব ভারতীয় কায়দায় হাসতে হাসতে বললেন সরি,দাদা আপনাদের সেলের চাকুরে চেনা নেই বলে বড় সাহেব পারমিশান দিলেন না। থতমত খেয়ে শব্দহারা। অনুরোধ-উপরোধ সব বেকার। ঘর খালি আছে,ছশো টাকা করে দুটি ঘরের জন্য বারশো ভাড়া দেবো, উপরন্তু সেলের চাকুরের তদ্বির দরকার। বিচিত্র নিয়ম। অসহায় হয়ে উনার সাহায্য চাইলে উনি মুর্গাপাড়ার হিল টপ হোটেলে ফোন করে বিফল হলে আমাদের বারবিল নেমে যাবার প্রস্তাব করেন এবং এক গাড়ীর মালিককে ফোন করে দেন। ওনার কাছ থেকে জানলাম কিরিবুরু-মেঘাতাবুরু সেলের দত্তক নেওয়া শহর। এখনের মানুষ সব ব্যাপারে সেলের ওপর নির্ভরশীল। গাড়ী এলে আমরা মেঘাতাবুরু বনবাংলো নিয়ে যেতে বলি। প্রসঙ্গত বলে রাখি আমরা উড়িষ্যার কেওনঝাড় জেলা থেকে এবার ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূমে জেলায় যাবো। দূরত্ব সাড়ে-পাঁচ কিমি। মেঘাতা মানে মেঘ আর বুরু পাহাড়। দিনের আলো তখনও সম্পূর্ণ না নিভলেও ল্যাম্প পোষ্টে আলো জ্বলে উঠেছে। রাস্তায় সে ভাবে মানুষের চলাচল নেই। বিক্ষিপ্ত ছড়িয়ে থাকা বাড়িঘরের জানলা দিয়ে ছিটকে আসা আলো রাস্তায় ছায়া-প্রচ্ছায়ার নক্সা। মাঠের পাশে ঝোপ ঘিরে জোনাকির মিট-মিট আলো। ঝুপ করে গাড়ী বেগ কমিয়ে থেমে গেলে,আমরা,বাংলোর লোহার গেটে ধাতব আওয়াজ তুলে অফিসারের কাছে সবিস্তারে আমাদের কথা জানালাম। কিন্তু বিধি বাম। ঘর আমরা পাব,কিন্তু আপাতত এখন অপেক্ষা করতে হবে কারণ কেয়ারটেকার নকুল বাবু বুকিং দেখেন এবং উনি মাকে নিয়ে কিরিবুরুতে ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন। রাস্তায় গাড়ীর কাছে এসে দাঁড়ালাম। সন্ধ্যা রাত হয়েছে,নিরালা রাস্তায় আমরা চারজন সঙ্গে অভয় শর্মা,গাড়ী ড্রাইভার এবং শেখর ওর বন্ধু ও সহকারী। ভিতর ভিতর প্রাণ পরিত্রাহি টানাপোড়েন। অফিসার কি বলেছে ওদের বিস্তারিত জানিয়ে কথামত মিটিয়ে দিলাম তিনশ টাকা ভাড়া। শীতের পরোয়া না করে এতক্ষণ সকলে হাল্কা পোষাকে ছিলাম ঠাণ্ডা জোরাল হাওয়াতে প্রত্যেকে গায়ে উঠল উইন্ড-চিটার। ভীরু-অবাক চোখে,গোল চাপা কালো মুখের দুই তরুণী দুর্বোধ্য ভাষায় নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে মিলিয়ে গেল সামনের অন্ধকারে । মাঝে মাঝে বাইক অথবা প্রাইভেট গাড়ীর আলোতে অন্ধকার সচকিত। লোহার গেট ঠেলে জিন্স এবং টি-শার্ট পরা দম্পতির জুতোর খট-খট আওয়াজ বাঁ-দিকে বাংলোর থাকবার ঘরের দিকে এগিয়ে যাওয়াতে নিঃশব্দতার গাম্ভীর্য তটস্থ। ঝুপ করে বাইক সামনে থামতেই অভয় হিন্দিতে বলল,নকুল তোমার অপেক্ষায় সব দাঁড়িয়ে আছি। নকুল জেনার সঙ্গে সকলে আমরা এগোলাম অফিসের দিকে।
পাশাপাশি দুটো ডাবল-বেড প্রশস্ত ঘর সঙ্গে এসি-টিভি এবং গিজার সহ এ্যাটাচ বাথ বরাদ্দ আমাদের। পাশের রুমটি চার বেডের কিন্তু ওটি বুকড। এর সঙ্গে কমন প্রশস্ত রান্নাঘর,গ্যাস,বাসনপত্র,ডাইনিং স্পেস কাম লিভিং রুম। হাত-মুখে জল দিয়ে ডাইনিং টেবিল পেরিয়ে সোফাতে বসতেই সিকান্দর চা দিয়ে গেল। কথোপকথনে জানলাম কেয়ারটেকার কাম কুক সিকন্দরের বাড়ী রাঁচি। চাল-ডাল-সব্জী এনে দিলে ও রান্না করে দেবে,বিনিময়ে গ্যাসের ও পরিশ্রমের মূল্য দিতে হবে। নিজেদের মধ্যে রেশন কিনতে বেরনো নিয়ে যখন কথা চলছে,শেখর জানালো সেলের ক্যান্টিন থেকে নকুলের বাইকে করে রাতের খাবার নিয়ে চলে আসুন কাল ভাববেন এখানে খাবার কথা। সেতু খাবার আনতে বেরোলে,আবীর আর বাদলদা, শেখর ও অভয়ের সঙ্গে কালকের প্রোগ্রাম,গাড়ীর ভাড়া ইত্যাদির ফয়সালা করে জানাল,কাল বেরবো সকাল সাড়ে আটে, ড্রাইভার ও গাড়ীর ভাড়া ১১০০ টাকা পেট্রল আলাদা।
নীলচে ভোরে আবীরের ডাকে বিছানা ছাড়া।
বাতাসে শীতের ধার। ক্যমেরা হাতে বাংলো থেকে বেরিয়ে বাঁ-হাতি রাস্তায় খানিক গিয়ে আদিবাসী
গ্রামের বাইরে টাইমকলের জলের চাতালে রাখা এ্যালমুনিয়ামের হাঁড়ির সারি। একটা-দুটো শুয়োর
ঘুরছে। কাঁথা মুড়ি দেওয়া বৃদ্ধ লাঠি হাতে বসে বেদম কাশছে।
 |
জলের চাতালে রাখা এ্যালমুনিয়ামের হাঁড়ির সারি,ছবিঃ আবীর বোস |
ডানদিকে উঁচু-নিচু ঢিবি আর
শালের গাছ। সামনে ঢালু পিচের রাস্তা ধরে তরতর করে নামছি। দুজন সুঠাম চেহারার যুবক জগিং
করতে করতে আমাদের ক্রশ করলো। রাস্তা দু-দিকে ভাগ হয়ে গিয়েছে। আমরা সোজা এক কোমর লম্বা
ঝোপ-ঝাড়ে ঢাকা সামনের টিলার ওপরে উঠে এলাম। সামনে কুয়াসা ঢাকা সবুজ পাহাড়ের সারি। আকাশে
সূর্যদেবের ওঠার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। অভ্যাসের পরাধীনতা সরে গেলে মানুষ যেমন চঞ্চল
হয়ে ওঠে সেইভাবে আলো,আকাশের ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা-ধুসর মেঘে লুটোপুটির জন্য চঞ্চল। শুয়ে-বসে,বাঁদিক-ডানদিক করে বিভিন্ন জন বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তোলার কসরতের মধ্যে ক্যামেরার লেন্সকে সুপ্রভাত জানিয়ে নরম রঙের আভায় প্রকৃতি
আনন্দময়। কুয়াসা চোঁয়ানো আলোর কোমল বাহুডোরে
 |
নরম রঙের আভায় প্রকৃতি আনন্দময় |
ঝলমল করে জ্বলে ওঠে সবুজ মখমলে মোড়া সাতশো পাহাড়ের দেশের (হো ভাষায় সারান্ডা মানে সাতশো পাহাড়ের দেশ) গাছপালা,পশু-পাখী আর ঘুমন্ত
পাহাড়গুলো। পাখীর মৃদু কোলাহল,বাতাসের ফিসফিসানি ছাড়া মধুর নিস্তব্ধতায়,মনের আকাশে
ভেসে ওঠে কত নতুন আকাশ,অচেনা পাহাড়,অজানা বনজঙ্গল,আঁকাবাঁকা নদী ঘেরা নামহীন জনপদের টুকরো-টুকরো অসংখ্য অস্থির
ছবি। পিপাসিত চোখের সামনে অরণ্য-পাহাড়ের বিরাট পটভূমি ক্রমশ উপভোগের সূক্ষ্ম তার গুলোকে
বেতাল করলে নেমে আসি নীচে।
 |
ভোরের আলোয় মেঘতাবুরু |
যাবার কথা ছিল মাইন দেখতে। অভয় পাস যোগাড় করতে পারেনি সেল অফিস থেকে অতএব শেখরের
প্রস্তাবে আমরা কারো নদী দেখে চলে যাব মুর্গা-মহাদেব মন্দির। ফিরে এসে দেখবো পুন্ডুল আর ঝিংরা
নালা জলপ্রপাত। তীব্রবেগে গাড়ী ছুটল জঙ্গল আর পাহাড় কাটা রাস্তা ধরে। গুয়া ফরেস্ট বাংলো
পেরিয়ে বাঁদিকে বাঁক নিয়ে গ্রামের দু-চার ঘর ছেড়ে থমকালো খোলা সবুজ মাঠে। ধুসর মেঘে
সূর্যের তেজ আপাতত জব্দ। নীল আকাশে শরতের পেঁজা তুলোর মত উড়ন্ত মেঘ তিনদিকে পাহাড়ের মাথায় জমাট বেঁধে রং পাল্টে ধূসর।
নীচ দিয়ে অতি ধীরে বয়ে চলে কারো। ভূগোলের পাতায় এ-নদীর নাম থাকলেও ইতিহাসে নাম তোলার
জন্য কোনও গৌরবময় ঘটনা একে কেন্দ্র করে ঘটেনি, বরং নিশ্চুপে প্রয়োজন মিটিয়েছে বনের বৃক্ষ
আর বনবাসীদের। নদীর জল এতই শান্ত,বাতাসও তরঙ্গ তোলে না,অথচ বাড়ন্ত বর্ষায় এ নদী হয়ে
ওঠে দুর্দমনীয়।
 |
মুর্গা-মহাদেব মন্দির |
গাড়ীর চলা আবার শুরু। পাহাড়ী রাস্তা শেষ করে সমতলের চওড়া রাস্তা। পথের দুপাশে
শহুরে অশান্ত ব্যস্ততা পেরিয়ে চা বিরতি। চোখ
যায় রাস্তার কিছু দূরে পরিত্যক্ত খনিতে,মনে হচ্ছে সবুজ অরণ্যকে কেউ রক্তাক্ত করছে খামচে।
নোয়ামুন্ডির টাটা কোম্পানীর কম্পাউন্ড পেরিয়ে গাড়ীর দ্রুত লয় ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসে কঙ্কালসার
রাস্তায়। সঙ্গে হাঁসফাঁস গরম,দমবন্ধ করা লাল ধুলো আর ঝাঁকুনি। দুপাশে পাহাড়-জঙ্গল। পাহাড়ের নীচে কোথাও বা চাষ হচ্ছে। চাষের জমি ঘিরে জনপদ। সর্ষের প্রাণবন্ত হলুদ ফুলগুলোর জৌলুস রোদের তেজ আর রাস্তার
লাল ধূলোয় ম্রিয়মান। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ উড়িষ্যার কেওনঝাড় জেলার ঠাকুরানী পাহাড়ের
নীচে মন্দিরের সামনে প্রশস্ত প্রান্তরে থামল আমাদের গাড়ী। ডানদিকে পূজা সামগ্রীর দোকান।
কথায় কথায় দোকানীর কাছ থাকে জানি মকর-সংক্রান্তি এবং শিবরাত্রিতে প্রচুর ভক্তসমাগম
হয়। ব্রাহ্মণের সঙ্গে আদিবাসীরাও মহাদেবের পূজারী এখানে। চারদিকে পাহাড় আর ঘন জঙ্গলের মধ্যে প্রাচীন মন্দির উপরি
পাওনা জলপ্রপাত। পাশাপাশি দুটো গেট,একটি গেটের রাস্তা চলে যাচ্ছে মন্দিরে,পাশের সমান্তরাল
রাস্তা সান বাঁধানো সিঁড়ি পেরিয়ে নেমেছে জলপ্রপাতের দিকে। অনেক ভ্রমণার্থী জলপ্রপাতে
অথবা প্রপাতের নীচে কুন্ডের জলে আনন্দ স্নানে মগ্ন। যে হেতু মন্দির এখন বন্ধ আমরা জলপ্রপাতের
রাস্তা ধরে এগিয়ে মন্দিরের রাস্তাতে পড়লাম। তীব্র দাবদাহে ক্লান্ত দু-চার জন জিরোচ্ছে মন্দির চত্বরের গাছের ছায়াতে। আমরাও বসে পড়লাম তাদের
পাশে।
মনটাই সব। মনের তার বেতাল বাজা মানে সোনাও রাং হয়ে যায়। আমাদের দশা হয়েছে সেইরকম।
কারো নদীর নির্জনতার উদার রূপে ভুলে ছিলাম মাইন দেখতে না পাওয়ার হতাশা কিন্তু এখানে
এসে মন্দিরের দরজা বন্ধ তার সঙ্গে রোদের ভীষণ তেজে সকলেই অবসন্ন। কোথাও পড়েছিলাম ‘বৈচিত্রের অভাব আমাদের জীবনে নয়,আমাদের মনে,অভাব আমাদের মনের বৈচিত্র সৃষ্টি
করবার ক্ষমতার’। গরমে বাদলদার অসুস্থতা বোধ,সেতু আর আবীরের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা। সব মিলিয়ে,সকালের হতাশা এখন পারস্পরিক সম্পর্কের
স্থান সঙ্কোচন করে নিস্তব্ধ-নির্বাক। খাবার জন্য ফিরে আসা কিরিবুরু সেল অতিথি নিবাসে।
 |
পশ্চিমি সূর্যের চারিয়ে যাওয়া আলোয় ঝলমলে মেজাজী গাছগাছালি |
পুন্ডুল আর ঝিংরানালা জঙ্গলের ভিতর জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে আমাকে একা যেতে হবে।
যাবার আগে মেঘাতাবুরু বনবাংলোতে সঙ্গীদের রেখে প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ রওনা দিলাম
পুন্ডুলের দিকে। কিরিবুরু হিলটপ পেরিয়ে পাহাড়ী নির্জন রাস্তা একসময় ঢুকে পরে গ্রামের
লাল মোরাম ফেলা চিকন রাস্তায়। সে রাস্তা কিছুটা
এগিয়ে গ্রাম ছাড়িয়ে ঢুকে যায় শাল-সেগুন-মহুলের জঙ্গলে। পাখীর ডাক,ঝুরুঝুরু পাতা ঝরা হাওয়া,পশ্চিমি সূর্যের চারিয়ে যাওয়া আলোয় ঝলমলে মেজাজী গাছগাছালির বনজ ঘ্রাণ। পথের দুপাশে ঝরা পাতায় ছাওয়া লাল মাটিতে লম্বা লম্বা
শাল-পিয়াল গাছের মধ্যে দিয়ে এঁকে বেঁকে, ঘুরে
ঘুরে,ঝন ঝন শব্দে বনের শান্তি ভেঙে,খানা-খন্দে হোঁচট খেতে খেতে গাড়ী এগিয়ে চলেছে। মানুষ
জনের দেখা নেই,মাঝে মাঝে গা ছমছম করা ঝিঁঝিঁর শব্দ। প্রতিটি বাঁক ঘুরলে মনের ভিতর আশঙ্কা,এই
বুঝি শুঁড় তুলে হাতী রাস্তা আটকালো। সবাই থাকলে বেশ খুশীর হাট বসত বাদলদাকে নিয়ে। যে কোন গম্ভীর পরিবেশকে মজার কথা বলে হাল্কা
করতে বাদলদার জুড়ি মেলা ভার। প্রাচীন স্বপ্নেশ্বর শিব মন্দিরের সামনে গাড়ী থামল।
আর একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাহস বাড়ে মনে। এখান থেকেই জলপ্রপাতের মৃদু গর্জন
কানে আসে। মন্দিরে পিছন দিয়েপায়ে চলা রাস্তা,ঘন গাছপালার মধ্যে দিয়ে
 |
পুন্ডুল জলপ্রপাত |
এগিয়ে গিয়েছে
জলপ্রপাতের দিকে। অভয় জানালো এটা কারো নদীর উৎস। শ্যাওলা ঢাকা বড় বড় পাথর ভেঙে কলকল আওয়াজ তোলা উচ্ছ্বসিত জলের স্রোত নেমে আসছে
তিরতির করা নদী কারোতে। দুপাশে লাবণ্য উছলানো ঘন বনের পাতায় পাতায় খুশির হাসি। রাতে
বন্য প্রাণীরা জল খেতে আসে এখানে। সূর্য যখন সোনালী আভা ছড়াল জলে স্থলে গাছের পাতায়,তখন মন্দিরে প্রনাম
জানিয়ে জঙ্গলের আলোছায়া
 |
কারো নদী |
পথ ধরে গ্রামের পথে। ধোঁওয়াসার কলঙ্ক মোছা আকাশে,চারপাশে ঘেরা
পাহাড়ে পাহাড়ে ঝুঁকে পড়া রঙীন ঝোপ ঝোপ মেঘ। গ্রামের ঘর থেকে পেঁজা তুলোর মত কাঠের জ্বালের ধোঁয়ার
রেখা,গাছের পাতায় আটকে থাকা রাঙা আলোর আভায় পুরানো গন্ধমাখা কিংখাবের মত জ্বলজ্বলে।
চরাচরের নিস্তব্ধতাকে চকিত করে আসন্ন সন্ধ্যাকে আহ্বান জানায় পোষা মুরগীর ডাক কিংবা ঘর ফেরতা গরুর গলার ঘণ্টা।
বাতাস ফিস ফিস করে শোনায় ‘হে বদ্ধ জীব,সন্ধ্যার আকাশতলে দাঁড়িয়ে সেই পরিপূর্ণ,অবাধ
মুক্তির বাণী শ্রবণ কর’ ।
ঝিংরা নালা যেতে গেলে অন্ধকার নেমে
আসবে তাই সেটা বাদ গেল,তবে গল্প যা শুনলাম সেটাও খুব সুন্দর। রেষ্ট হাউসে যখন ফিরলাম
মেঘাতাবুরু তখন কুয়াসা ঘেরা জ্যোৎস্নায় মোহময়ী। সেতু,আবীর আর বাদলদা মিলে তখন রাতের খাবার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। সিকান্দার সাহায্য করছে।
সকাল আটটায় সকলে রেডি হয়ে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা। আজ আমরা যাবো থলকোবাদ,সময় থাকলে
কুমডি। বন যাত্রার অনুমতি পেতে অল্প বেগ পেতে হয়েচে কারণ বনের পথে মিলেছে তাজা কিছু
প্রাণঘাতী বোমা। সারান্ডা অঞ্চল এক সময় ছিল মাওবাদী ডেরা এখন আগের মত না থাকলেও মাঝে
মাঝে অস্তিত্ব জানান দেয়। প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ গাড়ী এল। যাবার পথে বাজারে প্রাতরাশ
খেয়ে দুপুরের খাবারের বাজার করা। থলকোবাদ বনবাংলোতে চাল ডাল আনাজ নিয়ে গেলে ওখানে খাবার বানিয়ে দেয়
কেয়ার টেকার। মাইনসের ভিতর দিয়ে গিয়েছে আমাদের পথ,সেইজন্য গাড়ী সেলের কিরিবুরু মাইনসের
গেটে থমকালো অনুমতি পত্রের জন্য। এরপর ঝাড়খণ্ডের চটুল গান বাজিয়ে কিরিবুরু মাইনসের লোহার লালা রঙে
রাঙ্গানো পথ-ঘাট-গাছপালার ভিতর দিয়ে চলতে চলতে একসময় চোখে পড়ে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সবুজ বোর্ডে লেখা থলকোবাদ আর ১৪ কিমি। বিরক্ত হয়ে সেতু গান থামাতে
বললে শেখর ঘাড় নেড়ে জানাল,গান বাজলে মাওবাদীরা জানবে আমরা ট্যুরিস্ট এবং সে জন্য আমরা
কোন ভাবে টার্গেট হব না। আবীর হাসতে হাসতে সব জঙ্গলে গাইড বাঘ-ভাল্লুক-হাতী এসবের ভয়
দেখায় তোমাদের ভয় দেখানোটা বেশ ইনোভেটিভ। আচ্ছা বন্ধ করতে অসুবিধা হলে অন্য গান বাজাও
অথবা আস্তে কর। সেতুর কথায় আস্তে হল সাউন্ড। দুপাশে লম্বা-বেঁটে-মাঝারি-ছোট-লতানো গাছের ভিড়ে ঠেলে গা ছমছমে যাত্রা। মাঝে মাঝে নিকষ কালো হো জাতির শক্ত-সমর্থ
মানুষের যাতায়াত। জঙ্গলের ভিতরে গ্রামে এরা থাকে। হো- মানে মানুষ আর আমরা হলাম ডিককু,মানে
বিদেশী। এখন অবশ্য এসব বেড়া ভেঙে মিলেমিশে জগাখিচুড়ি। হঠাৎ আবীর গাড়ী থামাতে বলে,একদল
নারী-পুরুষ মুল পথ থেকে বিশ ফুট দূর দিয়ে আধুনিক পোষাকে জঙ্গলের পথে একসুরে একটানা গুনগুন করতে করতে হাঁটছে,মায়ের পিঠে পিছমোড়া করে বাঁধা শিশু। প্রত্যেকের হাতে থলে,দুএকজনের পিঠে স্যাক ব্যাগ। শেখরের বারন অগ্রাহ্য করে ছুটেছিলাম কথা বলতে। লাভ হয়নি,তারা পায়ের বেগ ও গলার সুর না থামিয়ে উই ঢিবি
 |
মায়ের পিঠে পিছমোড়া করে বাঁধা শিশু,ছবিঃ আবীর বোস |
কাটিয়ে এগিয়েছে শুকনো পাতায় মস্-মস্ শব্দে। গাছের ছাওয়ায় দাঁডানো গাড়ীর কাছে আসতে,অভয়, শেখর
দুজনেই আমাদের নিষেধ করল এ পথে মানুষের সঙ্গে বেশী কথা বলা বা না জিজ্ঞাসা করে তাদের
ফটো তোলা-কোনটাই যেন না করি। জঙ্গলে পাতা ঝরার কামাই নেই। গাছে গাছে লালচে,কচি সবুজ
রঙের পাতার ফাঁক-ফোকর গলে রোদের চিকন কিরণ শরীরে উত্তাপের জ্বলন ধরায়। নাম না জানা
কোন পাখীর তীব্র বিলাপে উচ্ছ্বাসহীন জঙ্গলে গভীর বিষন্নতা। উদাস বিষন্নতা ভেঙে কতগুলো হনুমান আমাদের সামনে দিয়ে
তীব্র বেগে ছুটে পুকুরের পাড়ের গাছটায় উঠলো। হঠাৎ নিস্তব্ধতার পতনে,তপস্বী বক সাদাডানা
মেলার উজ্জুগ করে আবার জলের কিনারে বসল। গাড়ী শুকনো পাতাদের ব্যতিব্যস্ত করে আমাদের
নিয়ে যাত্রা করল আরো গভীরে। সি.আর.পি.এফ চৌকিতে কাগজপত্র জমা করে প্রায় বারোটা নাগাদ
থলকোবাদের বনবাংলোর সামনে পৌঁছলাম আমরা। মঙ্গলকে চাল ডাল ডিম সব্জী বুঝিয়ে চা খেয়ে থলকোবাদ
সি.আর.পি.এফ ক্যাম্পের পাশ ধরে
লেপার্ডস কেভে। অরণ্য এখানে আদিম। ডানে ঘন জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়,বায়ে অনেকটা ফাঁকা জায়গার
মধ্যে বহু পুরনো ভেঙে পড়া এক ওয়াচ টাওয়ার ও বিরাট উইয়ের ঢিবি। শেখর জানালো মাঝে মাঝেই
জন্তু-জানোয়ার আসে এখানে। জায়গার নাম লিগিরদা। মাথার ওপরে ফাঁকা জায়গা দিয়ে দেখা যায়
নীল আকাশ। সামনে শুকনো পাতার গালিচা মাড়িয়ে এগোলে প্রাচীন গুহা। গুহার দেওয়ালে এক জায়গায়
চুন দিয়ে Gods Lived Here
লেখা। এত সুন্দর স্থানে ঈশ্বর না থাকার মত কোন কারণ নেই। গুহা ছাড়িয়ে সামনে ঘন ঝোপ-ঝাড়
ভেঙে কিছুটা এগোতে মনের ভয় টেনে আনল টাওয়ারের কাছে। হঠাৎ বাদলদা লোহার মই বেয়ে উঠছে
টাওয়ারে। করছেন কি!বাদলদা কনডেম টাওয়ারে আপনি উঠে পরলেন!বিষ্মিত সেতুর কথায় বাদলদা- জঙ্গল দেখলে আমি কৈশোরে ফিরে যাই সেতু। স্কুল জীবনে আমার প্রিয় বেড়াবার জায়গা ছিল চন্দ্রকোনার শাল-সেগুনের জঙ্গল।।
 |
কনডেম টাওয়ার |
প্রত্যেকের ভিতরে ছেলেবেলা বেঁচে থাকে তবে বড়ত্বের চাপ উপেক্ষা করে কেউ কেউ পাকা বয়সে কাঁচা হতে পারে।
সময়ে বাঁধা মানুষ যেমন রাস্তা চলতি মন্দিরে খানিক দাঁড়িয়ে
নমস্কার জানিয়ে হাঁটা দেয়,আমরাও সেইভাবে এখান থেকে বিদায় নিয়ে থলকোবাদ গ্রাম দেখে বনবাংলোয় ফিরলাম। দুপুরের খাওয়া সেরে আবার বেরবো। আরো দুটি গাড়ী নতুন এসেছে। মঙ্গল দা
হাঁড়িয়ার নেশায় চুর কিন্তু বেহুঁশ না। আমাদের দেখে মোটা গোঁফের নিচে মুচকি হাসিতে আমাদের
খাবার ঘরে যেতে বললেন। খাবার পর সবাই বাংলোর সামনে চাতালে এসে দাঁড়িয়েছি।। সদ্যপরিচিত তমালবাবুর সঙ্গে আলাপে জানতে পারি ছয় বন্ধু কর্মজীবনের অবসরের পর প্রতি দুমাস অন্তর নিজেদের গাড়ীতে বেরিয়ে পরেন সাত-দশ দিনের ভ্রমণে। আমরা এখনে রাত কাটাবো না শুনে অবাক হয়ে বলেন ভুল সিদ্ধান্ত ব্রাদার,জঙ্গলে রাত না কাটালে তার সাথে আত্মীয়তা হবে কেমন করে!বিস্তীর্ণ সারান্ডাতে সব দিক দিয়ে ঢুকেছি প্রথম যখন থলকোবাদে আসি তখন ছিল আরো গভীর,সবুজ,প্রাণবন্ত।বাংলোতে ছিল।সাহেবী কেতা। মাওবাদীরা সে বাংলোকে ভেঙে দিলে তৈরী হল এবাংলো।। পথ চলতে দেখা মিলত বুনো জন্তুদের। মানুষ সব শেষ
 |
থলকোবাদ গ্রাম |
 |
থলকোবাদ বনবাংলো |
করে দিল। একসময় সারান্ডার
জঙ্গল ছিল সরাইকেল রাজাদের শিকারের স্থান। রাজা চলে গেলেও সারান্ডার জঙ্গলের কৌলিন্য
খাটো হয়নি,এশিয়ার সবচেয়ে বড় শাল গাছের জঙ্গল
এটা (৮২০ব.কিমি)। অভয়ের ডাকে তমাল বাবু লজ্জিত
হয়ে হেসে বলল দেখেছেন বেআক্কেল কেমন, আপনাকে আটকে রেখেছি,এগোন,টয়বো ফলস্ টা অব্যশই দেখবেন। নমস্কার
জানিয়ে গাড়ীতে উঠলাম। শেখর জানালো আগে ভিউ পয়েন্ট দেখে আমার যাবো ফলসের দিকে। কিছু
রাস্তা পেরতে চোখে পড়ল,ফাঁকা লালমাটির জমির
শেষে অর্দ্ধবৃত্তাকার টিলার ওপর নিষ্পত্র নেড়া গাছের সারি। ঘন মেঘ ফাটা তীক্ষ্ণ রূপালী
রোদের ঝিকমিকে অবসন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে,মাথার ওপর একখণ্ড কালো মেঘের কাছে বৃষ্টির আশায় গাছেরা
শুকনো ডালপালা তুলে জানাচ্ছে কাতর প্রার্থনা। নীচের লাল ধুলো ওড়া জমিকে চাষের জন্য
 |
বৃষ্টির আশায় গাছেরা শুকনোডালপালা তুলে জানাচ্ছে কাতর প্রার্থনা |
প্রস্তুত করছে উদোম গায়ে শক্ত চেহারার পুরুষ। শিশু সন্তানকে বুকে চেপে মা ও তার আরেক
সন্তান শুকনো কাঠ কুড়িয়ে জড়ো করছে। মিশমিশে কালো মেঘ চুঁইয়ে নরম মায়াবী আলোয় গাছ-গাছালির
পাতা নিথর। মূক নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন চারপাশ। ঝড় আসবে বাদলদার মুখের কথা শেষ হবার আগে
টিলার মাথায় জমে থাক কালো মেঘ চিরে তীক্ষ্ণ বিদ্যুতের চমকে প্রায় অন্ধকার বনভূমি চকিত।
মাঠের কৃষক ও কাঠকুড়ানি মা,শিশুসন্তানকে বুকে চেপে অন্যহাতে আরেক সন্তানকে ধরে দৌড়
লাগাল নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। সোঁ সোঁ শব্দে ধুলো,গাছের পাতা,কুড়ো,আরো যা কিছু নিজের পথে পাচ্ছে ঘূর্ণিবায়ু তাকে নিয়ে যাচ্ছে উড়িয়ে।।
 |
নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড় |
বাধা সৃষ্টিকারী গাছের অহংকার দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে এগিয়ে চলেছে বাতাসের উদ্দাম
তোড়। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি মুখের ওপর তীরের মত বিঁধলে সন্ত্রস্ত আমরা গাড়ীতে আশ্রয়
নিলাম। তড়িৎময়ী কালবৈশাখীর তান্ডব মিনিট কুড়ির মধ্যে শান্ত হলে আমরা এগোতে থাকলাম।
রাস্তা ভীষণ বন্য। ভীষন চড়াই বেয়ে গোঁ গোঁ
শব্দে গাড়ী উঠে,হাল্কা চড়াই-উতরাই ভেঙে ভিউ পয়েন্টের পৌঁছানোর আগে উদ্দাম খোলা বাতাস বৃষ্টি
বয়ে এনে আছড়ে পড়ল চলার পথে। কোন রকমে গাড়ী ভিউ পয়েন্ট যাবার হাঁটা রাস্তার কাছে চাতাল
মত জায়গাতে থেমে গেল। বৃষ্টির রঙে গন্ধে শব্দে আমরা গাড়ীতে বন্দী। বৃষ্টি থামলে বোল্ডার ফেলা যে রাস্তা
ধরে ভিউ পয়েন্ট হেঁটে যেতে হবে তা বেশ পিচ্ছিল ও বিপদজনক দেখে সে পথে না গিয়ে,যে পথে
এসেছি সে পথ ধরে হাঁটা শুরু করলাম,ভেজা ঝরা পাতার গালচের ওপর দিয়ে। চারপাশে গাছের সমুদ্রে পাখির অস্ফুট মধুর কূজন। মেঘরাজ্যে বাদল ঝরানো মেঘ সরে গিয়ে নীলের উচ্ছ্বাস।গাছের গায়ে জড়ানো মোটা রশির মত লতানো গাছের পাতার ডগায় আটকে থাকা বৃষ্টির ফোঁটার ঝরে পরা টপটপ শব্দ আর বনজ সোঁদা গন্ধে আমোদিত প্রাণে কে যেন বলে ওঠে ‘পথিক জীবনটাকে বড় করে উপভোগ করো খাঁচার পাখীর মত থেকো না’।
 |
বৃষ্টি ভেজা অরণ্য |
গাড়ী রওনা দেয় ফলসের দিকে। পথে দুই সি.আর.পি.এফ জওয়ান
পথ আটকে কাগজপত্র দেখে ছাড় দিলে দেখি সামনের বাঁদিকের জঙ্গল থেকে দল বেঁধে আরো জওয়ান
স্নিফার ডগ নিয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে আমাদের পেরিয়ে গেল। রাস্তার কাদাতে গাড়ীর
চাকা বার বার আটকে যখন সামনের ঢালটা উঠতে চাকা স্লিপ করছে অভয় আর এগোতে সাহস পেল না।
গাড়ী ঘুড়িয়ে নিয়ে নিস্তব্ধ নির্জন জনহীন রাস্তায় বন-সন্ধ্যার অন্ধকারে ডেরার পথে। গাড়ী থেকে যেটুকু আকাশ দেখা যায় তাতে
 |
বন-সন্ধ্যার অন্ধকার |
তারারা মিটমিট আলো ছড়িয়ে আমাদের সাথে গতিশীল,নীচে গাঢ় অন্ধকারে হাওয়ায় উড়ন্ত জোনাকির
ছুটোছুটি। গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা দূরের বিন্দু বিন্দু আলো ক্রমশ এগিয়ে এসে উজ্জ্বল
হলে গাড়ীর গতি ধীর হয়। সামনে পর পর দাঁড়িয়ে থাকা দৈত্যাকার চাকার মাইনসের আকরিক পরিবহনের
গাড়ী। থামা এখানে বারন,অতএব চলন্ত গাড়ীর জানলা দিয়ে দেখতে দেখতে সেলের চত্বর পেরিয়ে মেঘাতাবুরু সেলের গেষ্ট হাউসের
সামনে। উল্টোদেকে সূর্যাস্ত দেখার জন্য সুন্দর চাতাল। পুব আকাশের চাঁদের আলোয় ক্রমশ
ফর্সা হয়েচে অন্ধকার। গুটি গুটি পায়ে ওপরে উঠে তাকিয়ে থাকি জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোয়
ধোওয়া পাহাড় আর অরণ্যের দিকে। নরম আলোর,অপূর্ব মায়ায় আছন্ন চরাচর। মনের গহনে বাঁশির
মেঠো সুর তুলে কে যেন পাতলা মেঘের মত রঙ্গীন মোড়কে ভাসিয়ে দেয় স্বপ্ন। হা হা হাসিতে
ভীত চাঁদ ক্ষনিকের জন্য নিজেকে আড়াল করে কালো মেঘের অন্তরালে। অন্ধকারের অন্দরে জমে থাকা নিবিড় নীরবতা ভেঙে
দূর থেকে ভেসে আসে ডিনামাইট দিয়ে পাহাড় ভাঙার গুম গুম শব্দ। আকাশের জ্বলজ্বলে ছিটানো নক্ষত্রের আলোয় দোমড়ানো মোচড়ানো দেহ নিয়ে বাংলোয় ফিরলে
সিকান্দার থালায় ছড়িয়ে দেয় সাদা ভাতের প্রাণের নেশা।
 |
মেঘাতাবুরু বনবাংলোর পিছনের টিলা |
পরদিন সকালে বেশ বেলা করে উঠে বনবাংলোর কাছেই মেঘাতাবুরুর
সাপ্তাহিক হাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বড় বড় গাছের নীচে পিচ রাস্তার
ওপরে প্লাস্টিক বিছিয়ে বসে থাকা আদিবাসী মহিলা ও পুরুষ দেশী মুরগী, পিঁপড়ের ডিম, কাঁচা
সব্জী,বাঁশের ঝুড়ি,কুলো,মশলাপাতির সঙ্গে বড় বড় এ্যালমুনিয়ামের হাঁড়িতে হাঁড়িয়ার সঙ্গে
ছোলা ও মাংসের চাট নিয়ে বসেছে যেমন তেমনি স্টল করে জামা-কাপড় থেকে হাঁড়ি-কড়া সব প্রয়োজনীয়
সম্ভারের দোকান মিলবে হাটে। চপ,সিঙাড়া,জিলিপি,ইডলি-ধোসার সঙ্গে
নতুন যে খাবার দেখলাম সেটা হল ঘুগনি দিয়ে গুলগুলা(ফুলুরির ক্ষুদ্র সংষ্করন)। অনেকে
বাইক,প্রাইভেট কার রাস্তার ধারে পার্ক করে দোকানে দোকানে ঘুরে সেরে নিচ্ছে প্রয়োজনীয়
কেনাকাটা কেউ বা সকালের খাবারটা সেরে নিচ্ছে কেনাকাটার ফাঁকে। সাপ্তাহিক হাটই এখাকার
মূল বাজার নচেত যেতে হবে বারবিল। গুলগুলা খেয়ে আমরা ফিরে এলাম বাংলোতে। ঝোলাঝুলি গোছগাছ করে চেনা ছন্দের জীবনের ডাকে বন-পাহাড়ের মায়া
ছাড়িয়ে যে পথে এসেছি সে পথে ফেরত যাবো এবার।

হিল টপ হোটেল :৭৫০৪২১৬০৫৫/নকুল বাবু:৯৪৩১৯৫০৪০২,৮৯৮৭৯০৩৭৩৯/অভয় শর্মা:৮৯৮৭৫৮০০২৭,৭৫০৪৫৭১৬২৩/শেখর:৯৪৭১৫৪০৫৭৮,৯৬৫৮৬৬২১৩১
I love this excellent piece of work because the blending of travel beauty is so perfectly mixed in a proper ratio...it brings the whole thing live...so refreshing ...👌
উত্তরমুছুনDrun...
উত্তরমুছুনFabulous , digital traveling in this tough time .....well explained in a lucid language ....expecting more ....this type of work really inspire to travel ....incredible India...✍
উত্তরমুছুনআবার যে কবে যেতে পরবো! মনে হয় বার বার যাই। আশা যে মেটেনি! সত্যিই হেতায় মেঘেরা করে কানাকানি আর মনে হয় যেনো ছোটো বেলায় ফিরে গেছি।
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর, পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি নিজেই যেন গল্পের মধ্যে ঢুকে গেছে
উত্তরমুছুনKhub sundor....osadharon
উত্তরমুছুনMarvelous,astounding,superb
উত্তরমুছুনফাটাফাটি....
উত্তরমুছুনthe description is so vivid, actually i forgot some of the details, excellent language trademark tarakda masterpiece, wish after the corona-virus restrictions is over, we will once again make another trip.
উত্তরমুছুনখুব ভাল লাগল। অসাধারণ ভাষা। দুবছর আগে গিয়েছিলাম। এক বন্ধুর মাধ্যমে সেইলের গেস্ট হাউস বুক করেছিলাম। থলকোবাদের বন বাংলোতে রাতে না থাকাটা সত্যিই জীবনের একটা বড় না পাওয়া। সব কিছু নস্টালজিক মনে হচ্ছে।
উত্তরমুছুনএমন ভ্রমণ ডায়েরি সত্যিই অনবদ্য। টুকরো টুকরো বাক্যে বক্তব্য সাজানো। আরো সুখপাঠ্য হয়েছে বর্ণনার সঙ্গে তথ্যের জোর মিলে। সব মিলিয়ে একটা মন ভালো লাগা ভ্রমণ বৃত্তান্ত।
উত্তরমুছুনImpressive work done
উত্তরমুছুনThe writing stand for creative,good,constructive and happy...a very good storyteller...👍👌
উত্তরমুছুনছবি নিয়ে কথা বলা মানে আমার মুর্খামি হবে!! সত্যি কিছু বলার নেই!! আর লেখাটা তবে আমার পড়তে দারুন লাগলো!! আরও চলুক নতুনের সন্ধান!!
উত্তরমুছুনIn One word Unparalleled tour Experience and Amazing Photos. Keep it up 💪👍
উত্তরমুছুন